দুর্নীতির ভেতরেও পরিবর্তন হয়: অভিজিৎ ব্যানার্জি
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
অর্থনীতিতে সদ্য নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি বলেছেন, একটি দেশে দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অচল হয়ে যায় না। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিমত জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অকেজো হয়ে যাবে তা নয়। মানে দুর্নীতির ভেতরেও অনেক কিছু হয়, পরিবর্তন হয়। যে দেশে দুর্নীতি আছে সে দেশে পরিবর্তন আটকে থাকে না। লোকেরা যারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকে, তাদেরও ভোট জেতার আশা থাকে।’
ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর উদাহরণ টেনে অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেন, “তিনি ‘বিখ্যাত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট’ ছিলেন বলে নানা লোকে বলে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় সবার জন্য স্কুল এবং অপুষ্টি দূর করার উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি।
দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে অভিজিৎ বলেন, কোনো একটি বিষয় দারিদ্র্য বিমোচন আটকে রাখে না। দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক বিষয়ে সমাধান লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে এবার আরও দুজন নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। তাদের একজন তার ফরাসি স্ত্রী এস্থার ডুফলো। পুরস্কার পাওয়ার পর ডুফলো বলেছিলেন, গত ৩০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে দুটো গ্রুপ খুবই লাভবান হয়েছে। একটি অংশ হচ্ছে অতি ধনী এবং অপর অংশটি হচ্ছে অতি দরিদ্র।
এ প্রসঙ্গে অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেন, ‘এ সময়ে মধ্যবিত্তরা মার খেয়েছে। যেমন মার্কিন দেশে, যেখানে আমরা থাকি, সেখানে মধ্যবিত্তরা মার খেয়েছে। সেখানে দরিদ্ররাও মার খেয়েছে। মার্কিন দেশে যারা দরিদ্র, তারাও পৃথিবীতে মধ্যবিত্ত। তারাও মার খেয়েছে। যারা মার খায়নি তারা হচ্ছে পৃথিবীর দরিদ্র দেশের দরিদ্র লোকেরা-ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীন- এসব দেশের দরিদ্রদের উন্নতি হয়েছে।’
পৃথিবীর নতুন ধন-সম্পদ সব ধনীদের কাছে যাচ্ছে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখান থেকে দুই-চার ফোঁটা যেগুলো ছিটকে যাচ্ছে সেগুলোও যদি গরিবরা পায় তাতেই তারা এগিয়েছে। কারণ তারা এতটাই দরিদ্র যে সে দুই-চার ফোঁটাও তাদের কাজে লাগছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে দারিদ্র্য একটি সমস্যা নয়, এটা বহুমাত্রিক সমস্যা। কিছু প্রকল্প আছে যার মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের জন্য কাজ করা যায়। অন্য আরেকটি অংশ আছে যারা তাদের চেয়ে কম দরিদ্র। ব্র্যাক অনেক আলাদা ধরনের প্রোগ্রাম করে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষাও রয়েছে। তাদের ধারণা আমাদের মতোই। নানা সমস্যার নানা সমাধান আছে।
আবদুল লতিফ জামিল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গুজরাটে মোদি সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কাজ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দরিদ্রদের উন্নয়নের জন্য অর্থ যাতে ঠিক মতো খরচ করা হয় সেদিকেই তাদের দৃষ্টি। কোন রাজনৈতিক দল সেটি করছে তা মুখ্য বিষয় নয়।
কলকাতা নিয়ে আক্ষেপ করে অভিজিৎ বলেন, কলকাতা এক সময় ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ও এগিয়ে থাকা শহর ছিল। সেখানে সবাই আসতো। সেই দিনটা এখন গেছে কলকাতার। সেটাই দুঃখের কথা।
নোবেলপ্রাপ্তির পর তার জীবন বদলাবে না বলেই মনে করেন তিনি। বলেন, আপাতত প্রতি ঘণ্টায়-ঘণ্টায় এখন মিটিং, ফোন কল, ইন্টারভিউ চলছে। আশা করি কিছুদিন পর এটা থিতিয়ে যাবে এবং আমার জীবনটা যা ছিল সেখানে পুরোদস্তুর ফিরে যাবে।’ তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলে আবার অনেকে ভুলও বলে।
অভিজিৎ ব্যানার্জি দারিদ্র্য বিষয়ে তত্ত্বের ভেতরে না থেকে হাতে কলমে দেখিয়েছেন যে দারিদ্র্যের চেহারাটা কেমন এবং সেখান থেকে বের হবার উপায় কী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে তত্ত্ব বের না করে লোকেরা যা করছে যেটা দেখে তার ভেতর থেকে তত্ত্বটা বের করেছি।’