ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রত্ন ঐতিহ্যের আঁতুড়ঘর

সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর
🕐 ৩:২৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৯

ইতিহাস-ঐতিহ্যের তীর্থভূমি দিনাজপুর। ধানের খৈ আর লিচুর রসে টইটম্বুর এখানকার মাটির সুগন্ধি কাটারিভোগ চাল ও চিড়ার আতিথেয়তায় সুনাম কুড়িয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের হেঁসেলঘর ও প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসের আঁতুড়ঘর এ জেলা। উর্বর মাটির এ জেলার নদীগুলোও সচল, দেশের শস্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে এখানকার মানুষের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। হিমালয়ের পাদদেশের অসংখ্য কৃতী ও স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের ধারক এ জেলাকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সুলতান মাহমুদ

একনজরে দিনাজপুর
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গোর এ শহীদ ময়দানের সংলগ্ন মাইলফলক জিরো পয়েন্ট থেকেই অন্যান্য মাইলফলকের কিলোমিটারের হিসাব করা হয়। দিনাজপুর শহীদ আসাদুল্লাহ সড়ক থেকে রামসাগর যাওয়ার পথে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এই জিরো পয়েন্ট মাইলফলকটি দিনাজপুরের অন্যান্য ফাইল ফলকের গণনা করা হয়।

দিনাজপুর জেলা ১৭৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি আছে, জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারেই রাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় ‘দিনাজপুর’। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে ‘দিনাজপুর’। দিনাজপুর জেলায় মোট আয়তন প্রায় ৩৪৩৮ বর্গকিলোমিটার। দিনাজপুর জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা আছে।

রসালো লিচুর আমন্ত্রণ
উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ দিনাজপুর জেলাকে লিচুর রাজ্য নামেও পরিচিত রয়েছে দেশ ও বিশ্বব্যাপী। দিনাজপুরে প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে লিচু চাষের জমির পরিমাণ। এখন সারা দেশে কম বেশি লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। রসালো ফল লিচু অনেকের কাছে ‘রসগোল্লা’ হিসেবে পরিচিত।

দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা বেশি। দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, চায়না ফোর, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি উল্লেখযোগ্য। জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর, মাসিমপুর, পুলহাট, সিকদারগঞ্জ, মহব্বতপুর, উলিপুর, খানপুর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু চাষ উল্লেখযোগ্য।

উপমহাদেশের মধ্যে সেরা ঈদগাহ মাঠ
দিনাজপুর জেলা শহরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ নামাজের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ৫২ গম্বুজের এই ঈদগাহ মাঠে এবার একসঙ্গে ৮ লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। এই ঈদগাহ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক বছর ধরে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের আয়তন সাড়ে ১৪ একর।

উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এই মাঠের মিনারটি ইরাক, কুয়েত, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী স্থাপনার আদলে তৈরি করা হয়েছে।

৫২ গম্বুজবিশিষ্ট মিনারের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। সব মিনার ও গম্বুজের প্রস্থ ৫১৬ ফুট। সৌন্দর্য বাড়াতে গম্বুজগুলো মার্বেল পাথরে মুড়ে দেওয়াসহ রঙ-বেরঙের বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো আছে।

খতিব যেখানে দাঁড়িয়ে বয়ান করেন সেই মেহরাবের উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। দুটি গেটের উচ্চতা ৩০ ফুট। ঈদগাহ মিনারটি সিরামিক ইটে আচ্ছাদিত। নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে মাঠের মাঝ বরাবর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত শত বছরের স্টেশন (অফিসার্স) ক্লাব, অন্য প্রান্তে সরিয়ে দিতে প্রাথমিক পর্যায়ে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মাঠের দক্ষিণ পাশে এক কনে স্টেশন (অফিসার্স) ক্লাবের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। মাঠের খানাখন্দও ভরাট করা হয়েছে। গম্বুজের পেছনে মুসল্লিদের জন্য রয়েছে অজুর ব্যবস্থা ও ভ্রাম্যমাণ টয়লেট।

সুন্দরতম মন্দিরের অহংকারে মোড়ানো কান্তজিউ
দিনাজপুরের স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন কান্তজিউ মন্দির কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগরে নিজস্ব শিড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। টেরাকাটা অলংকারের বৈচিত্র্যে এবং ইন্দো-পারস্য স্থাপনা কৌশল অবলম্বনে কান্তজিউ মন্দিরটি নির্মিত।

শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য এই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরটির অবস্থান শ্যামগড় এলাকায় হলেও বিগ্রহের নাম অনুসারে এর নতুন নাম দেওয়া হয় কান্তনগর। মন্দিরের উত্তরের ভিত্তিবেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, মহারাজা প্রাণনাথের (মৃত্যু ১৭২২ খ্রি.) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭০৪ খ্রিঃ থেকে মন্দিরটি নির্মাণ শুরু হয়। তার নির্দেশ মতে মহারাজার দত্তক পুত্র রাজ রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন। প্রায় ১ মিটার উঁচু এবং ১৮ মিটার বাহুবিশিষ্ট বর্গাকার বেদীর ওপর এ মন্দির নির্মিত। ইটের তৈরি মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার।

তিন তলাবিশিষ্ট এ মন্দিরের নয়টি চূড়া রয়েছে। এজন্য এটাকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়। শুরুতে কান্তজিউ মন্দিরের উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে কান্তজিউ মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পরে রাজা গিরিজনাথ মন্দিরের সংস্কার করলেও এর চূড়াগুলো আর নির্মাণ করা হয়নি। মন্দিরের প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও পাথরের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। এর পরিমাপ ১৯.২০ গুণ ১৯.২০ বর্গমিটার।

মন্দিরটি ১৫.৮৪ গুণ ১৫.৮৪ বর্গমিটার আয়তনের একটি বর্গাকার ইমারত। প্রতিটি তলার চারপাশে বারান্দা রয়েছে। মন্দিরের টেরাকোটা চিত্রে রামায়ণ ও মহাভারতের ঘটনা সংবলিত চিত্র ও মুঘল আমলের বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের পশ্চিম দিকে দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। এর নিচতলায় ২৪টি, দ্বিতীয় তলায় ২০টি এবং তৃতীয় তলায় ১২টি দরজা রয়েছে। ধারণা করা হয়, কান্তজিউ মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর আনা হয় হিমালয়, আসামের পার্বত্যাঞ্চল ও বিহারের রাজমহল পাহাড় থেকে।

এছাড়া ইট-বালি টেরাকোটা ও কঠিন পাথরের সংমিশ্রণে এটি তৈরি করা হয়েছে। ঐতিহাসিক বুকানন হ্যামিলটনের মতে, ?কান্তজিউ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম মন্দির। মন্দিরটি দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের একটি অংশ। দেবোত্তর এস্টেট বর্তমানে মন্দিরটি দেখাশোনা করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মন্দিরটি দেখাশোনায় সহযোগিতা করে থাকে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় মন্দিরটির সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

দিনাজপুর রাজবাড়ী
ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল দিনাজপুর রাজবাড়ী। মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বের প্রায় শেষলগ্নে এক ধর্মপ্রাণ ব্রহ্মচারীর দেবদত্ত সম্পত্তি থেকে দিনাজপুর রাজবংশ তথা জমিদারির সূচনা হয়। ওই ব্রহ্মচারীর নাম ছিল কাশী ঠাকুর। ব্রহ্মচারী কাশী ঠাকুরের মন্দির সংলগ্ন এলাকা ঘিরেই রাজার জমিদারী বিস্তৃত হতে থাকে। শ্রীমন্ত চৌধুরীর ভাগ্নে শুকদেব ছিলেন দিনাজপুর রাজবংশের প্রথম পুরুষ। আর এই রাজবংশের শুরু পঞ্চাদশ শতাব্দীতে। সুদীর্ঘ ৩০০ বছর স্থায়ী এ রাজবংশে প্রায় ১১ জন রাজত্ব করেন। এ সময়ে রাজবাড়ীটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দিনাজপুরের রাজবংশের শেষ যুগের রাজা ছিলেন মহারাজা গিরিজানাথ। তিনি ছিলেন কিংবদন্তির মতো। তার পৃষ্ঠপোষকতায়ই ১৯১৪ সালে দিনাজপুরে উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ষষ্ঠ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৬৪০ সালে যাত্রা শুরু হয়ে টানা ৪০০ বছর রাজা-মহারাজারা দিনাজপুর শাসন করেন। বর্তমানে বিশাল রাজপ্রাসাদ নিঝুম হতে হতে পরিত্যক্ত সম্পদে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ীটি।

২২৫ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদ
দিনাজপুর জেলার শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ মসজিদ নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। জানা গেছে, ২২৫ বছরের পুরনো মসজিদ নয়াবাদ মসজিদ। জেলা সদরের চেহেলগাজীর মাজার থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই নয়াবাদ জামে মসজিদ। নয়াবাদ গ্রামে এ মসজিদটি বিচিত্র মসজিদ নামে পরিচিত।

১.১৫ বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটির প্রধান দরজার ওপর স্থাপিত ফলকের তথ্য মতে জানা যায়, সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকালে ২ জ্যৈষ্ঠ ১২০০ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৭৯৩ সালে নির্মাণ করা হয়।

কথিত আছে, ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কান্তনগর মন্দির তৈরির কাজে পশ্চিমের কোনো দেশ থেকে আসা মুসলমান স্থপতি ও কর্মীরা এ গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের নিজেদের নামাজ পড়ার জন্য এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

ছাদজুড়ে বিশাল তিনটি গম্বুজ মসজিদটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মসজিদের চার কোণে ১২.৪৫ মিটার ও ৫.৫ মিটার আকারের মসজিদের চার কোনোয় চারটি অষ্টভূজ মিনারের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব হলো ১.১০ মিটার।

মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে রয়েছে একটি করে জানালা। পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে মোট তিনটি ধনুক আকৃতির মিম্বার। যেগুলো মসজিদের পূর্ব পাশের দেয়ালে তৈরি প্রবেশের তিনটি দরজা বরাবর পশ্চিম পাশের দেয়ালে তৈরি করা হয়েছে।

মসজিদের ছাদের মাঝের গম্বুজটি আকারে বড় আর দুই পাশের দুটি গম্বুজ একই আকারের। মসজিদটি তৈরির সময় দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে পোড়ামাটির টেরাকাটা কারুকার্য।

রামসাগর দীঘি আজও অতুলনীয়
নাম সাগর হলেও বাস্তবে কিন্তু সাগর নয়, বিশাল আকৃতির দীঘিই হচ্ছে রামসাগর। দিনাজপুরের রামসাগর উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ হলো বিশাল রামসাগর দীঘি। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে দিনাজপুরের রামসাগর অন্যতম। ঐতিহাসিক ভিত্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য প্রতি বছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে এ রামসাগর।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার সোজা দক্ষিণে রাস্তার পাশে অবস্থিত রামসাগরের জল ভাগের আয়তন ৭৭ একর, তবে চারদিকে টিলাকৃতির পাড়সহ আয়তন মোট ১৪৭ একর। ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বেলে পাথরে বাঁধাই করা দীঘির প্রধান ঘাট সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রামসাগরের গভীরতা প্রায় ৩০ ফুট। এই সুগভীর দীঘির জল কোনোদিনই শুকায় না।

জনশ্রুতি আছে, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ আলীবর্দী খানের সময়ে ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দীঘিটি খনন করা হয়েছে। সে সময় খরাজনিত দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকদের কর্মসংস্থান ও পানির প্রয়োজন মেটানোর জন্য রাজা এ দীঘি খনন করেছিলেন বলে জানা যায়। বর্তমানে অসংখ্য গাছপালায় সুসজ্জিত এ দীঘির পানিতে এর প্রতিচ্ছবি ও সুবিশাল জলরাশি মিলে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। রামসাগরে প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক পর্যটক এর অপূর্ব সৌন্দর্য এবং দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন। সরকারের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রামসাগরের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ মিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। রামসাগরের গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। রাজা রামনাথ রামসাগর দীঘি খনন করেছিলেন বলে তারই নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রামসাগর। দীঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল।

এই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ৭টি পিকনিক কর্নার। আছে শিশুপার্ক। এছাড়া সেখানে আছে কিছু হরিণ। এই উদ্যানে প্রবেশের জন্য রয়েছে টিকিটের ব্যবস্থা।

সীতাকোট বিহার
অতিপ্রাচীন বুদ্ধবিহার, যা স্থানীয়ভাবে সীতার কোট নামে পরিচিত। জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ বিহারের গঠনপ্রণালি ও বিভিন্ন প্রাপ্ত বস্তু দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, বিহারটি নির্মিত হয়েছিল সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে।

বিহারটি ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছিলো। পরে ১৯৭২-১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দেও খনন চালানো হয়েছিলো এই বিহারে।

ব্রোঞ্জনির্মিত একটি বোধিসত্ত্ব পদ্মাপাণি এবং বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী মূর্তি সীতাকোট বিহার থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। বিহার ভবনের দক্ষিণ দিকে একটু দূরে কিন্তু মূল ভবনের সঙ্গে আবৃত পথ দ্বারা সংযুক্ত সম্মুখভাগে বারান্দাসহ পাঁচটি কক্ষ পাওয়া যায়। পন্ডিতদের অভিমত এগুলি শৌচাগার হিসেবে নির্মিত হয়েছিল।

প্রতিটি কক্ষের প্রবেশপথও আলাদা। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে রয়েছে কুলঙ্গি। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এতে রাখতেন নিবেদন মূর্তি, প্রদীপ, পুঁথিসহ নানা কিছু। সীতাকোট বিহারের চারদিকে বেষ্টনী প্রাচীর ছিল। এটি ৮ দশমিক ৫ ফুট উঁচু ছিল, এতকাল পরও কোন কোন স্থানে ৪-৮ ফুট উচ্চতা টিকে আছে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper