ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা

আলম তালুকদার
🕐 ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৯

জীবনে ইলিশ মাছ খায়নি এমন বাঙাল দুনিয়াতে বোধহয় নেই! না খাইলেও নাম তো শুনেছেই। তার মধ্যে ইলিশ হলো গিয়ে আমাদের জাতীয় মাছ। ইলিশ শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭১ সালে আমাদের মুখে মুখে যে ছড়াটি উচ্চারিত হতো, সেটি চুলবুল চুলবুল করতে থাকে।

ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা
বোয়াল মাছের দাড়ি
ভুট্টো সাহেব ভিক্ষা করে
শেখ মুজিবের বাড়ি।

জানি না ইলিশ মাছের কতটি কাঁটা আছে। গুনে দেখিনি। তবে কাঁটা অনেক। আরও একটি কথা হলো, বাজার বা হাট থেকে ইলিশ মাছ হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে যখন ক্রেতা বাড়ির দিকে চলতে থাকে, তখন যার সঙ্গে দেখা হবে সেই ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করবে করবেই। তো এক মহাফ্যাসাদ! একবার কৃষ্ণচন্দ্র রাজা গোপাল ভাঁড়কে বলল, তুমি যদি একটা ইলিশ হাতে নিয়ে দাম বলা ছাড়া বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারো, তাহলে তোমাকে একশ’ টাকা বকশিশ দেব।
গোপাল বলল, পারব মহারাজ।

রাজা বলল, না পারলে জরিমানা এবং একশ’ ঘা বেত্রাঘাত হবে!
গোপাল তাতেও রাজি। একটা বড় সাইজের ইলিশ রাজা কিনে তার হাতে দিলেন। সঙ্গে দিলেন দুজন রক্ষী। যাতে ফাঁকি না দিতে পারে। তো গোপাল ইলিশ নিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে পরনের কাপড়চোপড় খুলে একদম ন্যাংটা হয়ে ধুতি দিয়ে পাগড়ি বানিয়ে মুখে কাদা প্যাক মাখিয়ে মাছটা হাতে ঝুলিয়ে সোজা বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। এখন তাকে যে-ই দেখে, বিস্মিত হয়। গোপাল কি পাগল হয়ে গেল? ইলিশের দাম আর কেউ জিগায় না।

যাক, পাঠক ঘটনা তো বুঝতেই পারছেন। বকশিশ অতিরিক্ত লাভ করতে পেরেছিলেন ওই গোপাল ভাঁড়!
ইলিশের বৈজ্ঞানিক নাম, টেনুয়ালোসা ইলিসা। ইংরেজরা আমাদের মতো উচ্চারণ করতে পারে না, তাই ওরা বলে ‘হিলসা’! ওড়িয়া বলে ‘ইলিশা’। তেলেগু ভাষায়, ‘পোলাশা’। গুজরাটি ভাষায় বলে ‘মোদেন’ ও ‘পালভা’। সিন্ধু এলাকায় বলে ‘পাল্লা’ আর বার্মিজরা বলে ‘সালাঙ্ক’। যে নামেই ডাকুক স্বাদের সমস্যা হয় এমনটা কেউ অভিযোগ করেনি! এখন বাংলাদেশে ইলিশ না ধরার মৌসুম চলছে। ২২ দিন ধরা নিষেধ। কিন্তু অনেকে চুরি করে জাটকা মাছ আটক করে থাকে। ধরা পড়লে জরিমানা দিতে হয়। ইলিশ মাছ সাধারণত দুভাবে খাওয়া হয়ে থাকে। একটা তাজা ইলিশ। আরেকটি কাঁটা ইলিশ। চাক চাক করে কেটে লবণ দিয়ে রাখা হয়। এটার স্বাদ আবার অন্যরকম।

মিথ আর ইতিহাসে ইলিশ মাছের প্রভাব ব্যাপক। হিন্দুশাস্ত্রে বিষ্ণুর দশ অবতারের এক অবতার হলো এই মৎস্য। শাস্ত্রমতে মৎস্য নিধনকারী ও মৎস্য চোরের জরিমানার ব্যবস্থা ছিল। মনুস্মৃতিতে মাছ চুরিতে দ্বিগুণ দণ্ডের বিধান ছিল। দ্বাদশ শতকের বিভিন্ন রচনাতে ইলিশের বিবরণ পাওয়া যায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে বলে এমন বৃষ্টিকে ‘ইলশেগুঁড়ি’ বৃষ্টি বলা হয়ে থাকে।

ইস! এতক্ষণ ইলিশ নিয়ে লিখতে গিয়ে ইলিশের গন্ধ পাচ্ছি। জিবে জল এসে পানি পড়তে শুরু করেছে। তালুকদার ইলিশের প্রেমে পড়েছে! শুনতে পাচ্ছি একটি তাজা ইলিশ আমাকে বলছে, ‘আমার নাম ইলিশ, অনেক কাঁটা আমার গায়ে, সাবধানে তাই গিলিস’!

একবার কবি নির্মলেন্দু গুণ কারফিউ পাস না থাকায় গভীর রাতে পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছিলেন। সাংবাদিক বলে পার না পেয়ে বলেছিলেন, পুলিশ ভাই, আমি একজন কবি! পুলিশ বলে, প্রমাণ?

তখন গুণদা এই ছড়া বলে মুক্তি পেয়েছিলেন- ‘বাত্তির রাজা ফিলিপস, মাছের রাজা ইলিশ, জামাইর রাজা পুলিশ’! পুলিশ তাকে কবি বলে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তি দিয়েছিল!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper