ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রপ্তানি ধস ঠেকাতে তৈরি পোশাকে প্রণোদনা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০১৯

তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, রপ্তানি হ্রাসের প্রবণতা ও হ্রাস অব্যাহত থাকার শঙ্কা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বাংলাদেশি মুদ্রার অতি মূল্যায়নের ফলে রপ্তানি আয় কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উদ্যোক্তারা ৫ শতাংশ সহায়তা চেয়েছিল। সরকার দিয়েছে এক শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন এ সহায়তা রপ্তানি ধস রোধে যথেষ্ট নয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সহায়তার দেওয়ার ফলে রপ্তানি হ্রাসের দোহাই দিয়ে উদ্যেক্তারা সরকারের কাছ থেকে আবারও টাকা বের করে নিয়ে গেল।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা পুরাতন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করবে তাদের রপ্তানি আয়ের ১ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবে। তবে যে সব উদ্যোক্তা নতুন বাজার রপ্তানি করে ও স্থানীয়ভাবে সুতা-কাপড় ক্রয় করে পোশাক রপ্তানি করে থাকে এবং ৩০ শতাংশের নিচে মূল্য সংযোজন করে তারা এ সহায়তা পাবে না। তৈরি পোশাক উদ্যোক্তাদের তথ্যমতে, ওভেন তৈরি পোশাকে ৬০ শতাংশ এবং নিট তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ এ নগদ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হবে।

এ হিসাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ১৩৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১২ দশমিক ৭১৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির মূল্যের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবে।

নিট তৈরি পোশাক রপ্তানিককারক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তাতে এ ১ শতাংশ নগদ সহায়তায় যথেষ্ট নয়। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চলমান ও আগামী দিনের সংকট মোকাবেলায় কমপক্ষে ৩ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিতে হবে এবং সব রপ্তানিকারককে দিতে হবে। তবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং আগামী দিনে তৈরি পোশাক খাতের জন্য যে সংকট অপেক্ষা করছে তা মোকাবেলা করা সম্ভব।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ে চেয়ে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। এ বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসের কৌশলগত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৯ দশমিক ১০৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। তিন মাসে সবচেয়ে রপ্তানি কমেছে ওভেন তৈরি পোশাকের। হ্রাসের হার ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে হ্রাসের এ হার খুবই এলার্মিং বলে মনে করছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের মতে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এখন বহুবিধ সমস্যা।

এগুলো হলো-ডলারের বিপরীতে টাকা অতি মূলায়িত হওয়া; উপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, বন্দর সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে লিট টাইম বেড়ে যাওয়া এবং ব্রেক্সিট ও মৃদু অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া। আগামী জানুয়ারি মাসের আগে এ সংকট মোচনের সম্ভাবনা খুবই কম। এ কারণে ১ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিলেও রপ্তানি ধস রোধ করা খুবই কঠিন হবে বলে মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় হ্রাস রোধে সরকারের কাছে থেকে নগদ সহায়তা নেওয়া অযৌক্তিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও তৈরি পোশাক শিল্পবিষয়ক গবেষক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক শিল্পকে এমনিতেই উৎসে কর কমানো হয়েছে। আবারও নগদ সহায়তা দেওয়া হলো। রপ্তানি যদি কমে যায় তাহলে প্রণোদনা দিয়ে কিভাবে রপ্তানি হ্রাস রোধ করা যাবে! তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা একদিকে বলছে চীন থেকে চলে কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসছে।

অন্যদিকে বলছে রপ্তানি কমে যাচ্ছে-এই দ্বিমুখী বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। সাম্প্রতিক মুদ্রার বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এটা রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে বলে জানি। তারপরও অন্যান্য দেশের তুলনায় টাকার অতি মূলায়নের প্রশ্ন কেন আসবে আমি জানি না। তিনি বলেন, প্রণোদনার আশায় না থেকে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। রপ্তানি হ্রাস সম্পর্কিত তথ্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

 
Electronic Paper