ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন

বিকল্প ইতিহাস অনুসন্ধান

ইমরুল হাসান
🕐 ৩:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০১৯

আমাদের ইতিহাস ভাবনা বা অনুসন্ধানের প্রাধান্য বিস্তারকারী ধারা পাশ্চাত্য শিল্প সমাজের জ্ঞানকা- দিয়েই প্রভাবিত। কিন্তু এর বাইরে উনবিংশ শতকের শেষপর্বে, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশকাল থেকেই এ অঞ্চলের পণ্ডিতরা প্রচলিত কাঠামোর বাইরে ইতিহাস অনুসন্ধানের প্রয়াস চালিয়ে আসছেন। গড়ে তুলেছেন ইতিহাস অনুসন্ধানের শক্তিশালী ধারা।

যতীন সরকারের ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’ বইটিতে ইতিহাস চর্চার উপরোক্ত ধারার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। তবে জনমানুষের দর্শন বা চিন্তাকে কেন্দ্রীয় বিষয় করে লেখক যতীন সরকারের ইতিহাস অনুধ্যান অবশ্যই ভিন্ন মাত্রার মূল্যায়ন দাবি করে। এক্ষেত্রে তিনি আশ্রয় করেছেন প্রাচ্য দর্শনের ভিত্তিভূমি প্রকৃতির সঙ্গে জগত-জীবনের সম্পর্ক সূত্রের ওপর।

সবচেয়ে উজ্জ্বলতম লেখনীটি হচ্ছে ‘প্রকৃতির প্রকৃত তাৎপর্য ও আমাদের সংস্কৃতি’ প্রবন্ধটি। এই লেখাতেই যতীন সরকারের কেন্দ্রীয় চিন্তার প্রকাশ পেয়েছে সবচেয়ে গোছানো ও পরিকল্পিতভাবে। আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত, দর্শন, রাজনীতি, সংস্কৃতি-রীতি-ধর্ম, জাতি-বর্ণ, সাহিত্য-সঙ্গীত, ভাষা-শব্দ, সংগ্রাম-প্রতিরোধ- এইসব পরিপ্রেক্ষিতের ঐতিহাসিক মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে তিনি প্রাচ্য দর্শনের প্রধানতম বিষয় প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক সূত্রকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন।

বিষয়বস্তুর গভীরতা ও তাৎপর্যের কাছে ১৫ পৃষ্ঠা, ৫ অনুচ্ছেদ তেমন কিছুই না; তবুও যতীন সরকার দীর্ঘ জীবন অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, ধী, মেধা দিয়ে তার চিন্তার নির্যাসটুকু তুলে এনেছেন ছোট আয়তনের উল্লেখ্য প্রবন্ধটিতে। প্রবন্ধটির শেষে তিনি একটি প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন, যেখানে প্রকৃতি ও সংস্কৃতি একই বিন্দুতে মিলে যাওয়া যৌথ ধারণা- ‘সংস্কারমুক্ত ও সংস্কৃতচিত্ত মানুষই প্রকৃতিস্থ মানুষ। এ রকম প্রকৃতিস্থ মানুষের হাতেই সুস্থ সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়। আর অসংস্কৃতচিত্ত সব মানুষই অপ্রকৃতিস্থ। সব মানুষ যাতে প্রকৃতিস্থ থাকতে পারে তেমন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠিত সব আন্দোলনই সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সেই সুস্থ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের স্বরূপ অন্বেষায় প্রবৃত্ত হয়েই এতক্ষণ ধরে প্রকৃতি নিয়ে আমাদের এত বাক-বিস্তার।’

যতীন সরকারের এই প্রত্যয়ের গভীরে পৌঁছতে গেলে প্রকৃতিস্থ ও অপ্রকৃতিস্থ সমাজ এবং প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সম্পর্ক সূত্রের ওপর দাঁড়ানো প্রাচ্য ভাব-মানস- এই উভয় বিষয়ের স্বরূপ উপলব্ধি করা জরুরি। দ্বিতীয় বিষয়টি আলোচিত হলেও প্রথম বিষয়টি কেন খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পায়নি তা লেখকের নিজস্ব বোধ-বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। তবে ‘প্রকৃতির প্রকৃত তাৎপর্য’ এর ওপর ভিত্তি করে দাঁড়াতে গেলে শিল্প সমাজের যান্ত্রিক ও কাল্পনিক চিন্তা-দর্শনের ওপর গড়ে ওঠা পুঁজিতান্ত্রিক বিশ^ ব্যবস্থার ব্যবচ্ছেদ জরুরি।

কেন পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ চরম অপ্রকৃতিস্থ? কোন কোন শর্তগুলো পুঁজিতান্ত্রিক সমাজকে অপ্রকৃতিস্থ করে রাখে? এসব কিছুর পর্যালোচনা জরুরি।

 
Electronic Paper