ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আবরার হত্যায় জড়িত কাউকে ছাড় দেব না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৬:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০১৯

আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেব না বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগকে ডেকে তাদের সবগুলোকে বহিষ্কার করতে বলেছি। পুলিশকে বলেছি তাদের গ্রেফতার করতে। কাউকে ছাড় দেব না। অন্যায়কারীর বিচার হবেই।’

বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশ্বাস দেন। নিউইয়র্ক ও ভারত সফর নিয়ে বিভিন্ন সফলতা এবং অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, বুয়েটের এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। এ ঘটনার আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে বলি। কিন্ত পুলিশ যখন সিসিটিভি ফুটেজ আনতে গেল তখন অনেকে বাধা দিল। আইজিপি আমাকে জানালো ফুটেজ আনতে দিচ্ছে না। তাদের আটকে রেখে দিয়েছিল। এ কাজে বাধা দিল কেন? পরে পুলিশ তিন ঘণ্টা পর ফুটেজ এনেছে। একটা কপি তাদেরকেও দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কে ছাত্রলীগ, কে ছাত্রদল এটা আমি বিবেচনা করব না। আমি বিবেচনা করব অন্যায়ভাবে একটা ছেলেকে মারা হয়েছে। তাকে ২১ বছর বয়সে হত্যা করা হয়েছে। এটা অমানবিক। ২০০১ সালে আমাদের অনেক নেতাকর্মীদের মেরেছে। তাদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারা হতো। তাদের বাইরে তেমন আঘাত দেখা যেত না, কিন্তু শরীরের ভেতরে জখম হতো, তারা মারা যেত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনায় জড়িত, তাদেরকে মেনে নেব না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগকে ডেকে বলেছি তাদের সবগুলোকে বহিষ্কার করতে। পুলিশকে বলেছি তাদের গ্রেফতার করতে। কাউকে ছাড় দেব না। অন্যায়কারীর বিচার হবেই। আমরা কারো নাম জানার অপেক্ষা করি নাই। তার আগেই আমি নির্দেশ দিয়েছি। গ্রেফতার শুরু হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, যে মা-বাবা সন্তান হারিয়েছে তার কষ্টটা কী? আমি তো নিজে বাপ-মা-ভাই-বোন হারিয়েছি, আমি তা বুঝি। সাধারণ পরিবারের একটি ছেলে। তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে এভাবে মারা! এ নৃশংসতা কেন? এ জঘন্য কাজ কেন? এদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এবং যত ধরনের উচ্চ শাস্তি দেয়া যায় তা দেয়া হবে। কারণ আমি বিচার পাইনি। আমার মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি ৩৮ বছরেও বিচার পাইনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক হত্যা হয়েছে। টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে দুপক্ষের গুলিতে সানিকে হত্যা করা হয়েছে। ওই বুয়েটে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কেউ তাদের গ্রেফতার করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিন বোমা, গুলি হতো, অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। আমাদের অনেক শিক্ষক বন্ধু-বান্ধব ছিল তারা বলতো- এখন বোমা-গুলি অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে এটি বন্ধ করেছি। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিন দুপুর দেড়টার দিকে ঢামেক মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি জানান, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আবরার হত্যার ঘটনায় গতকাল গ্রেফতার ১০ আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী।

এখন বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ১০ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 
Electronic Paper