দুশ্চিন্তার নাম মধ্যমাঠ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১২:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০১৯
ফুটবল বিশ্বকাপের পরবর্তী আসরের আয়োজক কাতার। এশিয়ান কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মধ্যপ্রাচ্যের এই দলটি। দুটো টুর্নামেন্টেই বাছাইপর্ব খেলতে হচ্ছে তাদের। এর অংশ হিসেবে আজ ঢাকায় আসছে কাতার। লক্ষ্য- দ্বিতীয় রাউন্ডে ম্যাচ। আগামীকাল ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে তারা।
নিঃসন্দেহে চেনা দুর্গে ম্যাচটা অগ্নিপরীক্ষার। এর ক’দিন পর আবার ভারতের মাটিতে আরেকটি ম্যাচ। ম্যাচ দুটিকে ঘিরে বড় কিছুর আশা করছে না বাংলাদেশ দল।
লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের চাওয়া ভালো ফুটবল খেলা; সামর্থ্যরে সবটুকু নিংড়ে দেওয়া। সেটাও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইনজুরি। বাংলাদেশের প্রধান কোচ জেমি ডের দুশ্চিন্তা এখন এই ইনজুরি নিয়েই।
প্রস্তুতিতে অবশ্য কোনো ঘাটতি রাখেনি বাংলাদেশ। ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচে ভুটানকে প্রদর্শনী ম্যাচে হারিয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। কাতার ম্যাচের আগে যা স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হয়ে আছে। কিন্তু অস্বস্তি যা ইনজুরি নিয়ে। চোটের কারণে কাতার ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন দুই মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনি ও আতিকুর রহমান ফাহাদ। এই দুজনকে ছাড়া বাংলাদেশের মধ্যমাঠে অচলাবস্থা তৈরি হয় কিনা সেটাই কার্যত শঙ্কার।
গোল করা মূল কাজ নয় মধ্যমাঠের সারথিদের। জোগান দেওয়াই দায়িত্ব তাদের। এর বাইরেও মাঠে আলাদা ব্যস্ততা আছে। আক্রমণের জন্য যেমন ওপরের দিকে উঠতে হয় তেমনি গোলপোস্ট আগলে রাখতে অনেক সময় নিচেও নেমে যেতে হয়। তাতে রক্ষণবিভাগও কিছুটা নির্ভার হতে পারে। মাঠে তাদের উপস্থিতি কখনো টের পাওয়া যায় না। তবে অনুপস্থিতিটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। জনি-আতিককে হারিয়ে তাই বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশ কোচ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া।
৪-২-৩-১ ফরমেশনে জামালের সঙ্গে ডাবল পিভট হোল্ডিং মিডফিল্ডার, মাঝে মাঝে স্ট্রাইকারের পেছনে জনি ছিল কার্যকরী এক খেলোয়াড়। অফুরন্ত দম ও ওয়ার্ক লোডের জন্য জেমির প্রথম পছন্দ তিনি। প্রতিপক্ষের পায়ে থেকে বল কেড়ে নিতে জুড়ি নেই তার। কিন্তু চোটে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের কোনো ম্যাচ খেলা হবে না এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের। ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় জনিকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে আট-নয় মাস। ফাহাদ তো দলের বাইরে চলে গিয়েছেন প্রাক বাছাইয়ের আগেই।
তাদের ছাড়াই অবশ্য ভুটানকে পরপর দুই ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু কাতারের মতো দলের বিপক্ষে এই দুজনকে ছাড়া মাঠে নামা অনেক কঠিন। দুই সতীর্থকে হারিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কাল প্রচারমাধ্যমকে জামাল বলেছেন, ‘মিডফিল্ডে আমার সঙ্গী সব একে একে ঝরে যাচ্ছে। জনি দলের বাইরে চলে গেল। ফাহাদ তো অনেক আগ থেকেই ইনজুরিতে। ওদের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ভালো ছিল। একজনও না থাকাটা আমার জন্য অস্বস্তিকর।’
বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন কোচ জেমি ডে। তাই দুই গুরুত্বপূর্ণ মিডফিল্ডারের চোটকে অন্যদের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ, ‘চোটের ওপর কারও হাত নেই। বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। তাদের অনুপস্থিতিতে অন্যদের সুযোগ হবে। বিকল্পরাও পরীক্ষিত।’
গত এশিয়ান গেমসে কাতার অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের মঞ্চ আলাদা; বিশ্বকাপ বাছাই। তবু ওই জয় থেকে অনুপ্রেরণা খোঁজার চেষ্টায় আছে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ কোচও তাই আশা ছাড়ছেন না। কাল গণমাধ্যমকে ইংলিশ কোচ বলেছেন, ‘ওই ম্যাচের জয় থেকে আমরা ভাবতে পারি যে ফুটবলে যে কোনো কিছুই সম্ভব। কিন্তু এটাও সত্যি- এই দলটা একেবারেই আলাদা। চ্যালেঞ্জটাও অন্যরকম। আমরা জমাট থাকার চেষ্টা করব, যাতে কাতার আমাদের হারাতে না পারে।’
দুটি প্রীতি ম্যাচে ভুটানকে ৬ গোল দিয়েছে বাংলাদেশ। বিপরীতে হজম করেছে একটি। কিন্তু কাতারের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক নয়, রক্ষণাত্মক কৌশলকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন স্বাগতিক কোচ ডেমি ডে, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রথমার্ধে গোল না খাওয়া। প্রথম ২০ মিনিটে যদি আমরা গোল না খাই, তবে ওরা গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। তখন অবশ্যই আমরা কিছু প্রতি-আক্রমণের সুযোগ পাব। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের দু-একজন খেলোয়াড় এই দলে আছে। ওদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই বাইরের বিভিন্ন লিগে খেলে। মানসম্পন্ন খেলোয়াড়। তবে আমরা গোল না খাওয়ার একই মানসিকতা নিয়ে খেলব এবং চেষ্টা করব প্রতি আক্রমণে যাওয়ার।’