ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শুদ্ধ হয়নি ছাত্রলীগ

হাসান ওয়ালী
🕐 ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ০৯, ২০১৯

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা শোভন-রাব্বানীকে। সে ঘটনার মাস না পেরুতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে। দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দৌরাত্ম্য কমাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ওপর প্রধানমন্ত্রীর কঠোরতার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগ শুদ্ধ হয়নি। যদিও ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, বুয়েটের হত্যাকাণ্ড বিছিন্ন ঘটনা।

ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। অভিযোগের সত্যতা উদ্ঘাটনে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

চাঁদাবাজি আর নির্মাণকাজ থেকে কমিশন দাবিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। এরপর থেকেই হিসাব করে পা ফেলতে থাকেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়-লেখক হলে নির্দিষ্ট কক্ষে থেকেই সংগঠন পরিচালনা করে আসছেন। পূর্ববর্তীদের মধ্যে রাতারাতি দায়িত্ব পেয়েই ফ্ল্যাট-গাড়ির মালিক না হওয়ায় রাজনীতি সচেতনরা প্রশংসা করেন। কিন্তু এর মধ্যেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কর্মীদের ওপর হামলা এবং সর্বশেষ বুয়েটে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করায় ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলা, বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম। দেশের বিভিন্ন সংকটে ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে সংগঠনটি। গত ১১ বছর ধরে ছাত্রলীগ মূলত আলোচনায় এসেছে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজিসহ নেতিবাচক কারণে। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের নিজেদের কোন্দলে নিহত হন ৩৯ জন। আর এ সময়ে ছাত্রলীগের হাতে প্রাণ হারান অন্য সংগঠনের ১৫ জন। সে ধারা থেকে ছাত্রলীগকে ফেরাতে উদ্যোগ নেন অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই শীর্ষ নেতাকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনেন তিনি। কিন্তু রোববার রাতে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমালোচকরা বলছেন, শুদ্ধ হয়নি ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগকে শুদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে পারলে এ অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

 
Electronic Paper