ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এ আমার এ তোমার পাপ

আবু বকর সিদ্দীক
🕐 ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৮, ২০১৯

ভিন্নমত প্রকাশের কারণে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে। কুষ্টিয়ার একটি মধ্যবিত্ত, প্রগতিশীল পরিবারের সন্তানকে হত্যার আগে ‘শিবির’ তকমাও লাগানো হয়।

সুন্দর আগামীর স্বপ্নে মেধাবী এই যুবক ওই দিনই মায়ের হাতের শেষ খাবার খেয়ে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। তার সহপাঠীরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে আদিম হিংস্রতায় মেতে ওঠে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবরার যা লিখেছিলেন, তা মিথ্যা বা বিকৃত হলে প্রচলিত আইনেই তাকে শাস্তি দেওয়া যেত। অহরহ দেশে ডিজিটাল আইনে মামলা হচ্ছে, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মীরা কারাগারে যাচ্ছেন। কিন্তু বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অসহিষ্ণুতার পারদ উগরে দিয়েছে। দম্ভ ও মোহে তারা তাদেরই মেধাবী সহপাঠীকে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে।

ছাত্রলীগের হাতে এ রকম নৃসংশতার শিকার হয়েছে আরও অনেকে। আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা নিয়ে নাটকীয় চিত্রও আমরা দেখেছি। রাষ্ট্র ব্যবস্থা জবাবদিহিতার মধ্যে না থাকলে সেখানে ভয়ানক অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়- বর্তমান অবস্থা অনেকটা সে সরকম।

এক সময় মেধাবী ছেলেরা লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি পেত, তাদের বাবা-মায়ের ও নিজের দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ থাকত। এখন হাজার হাজার, লাখ লাখ মেধাবী উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একটি কেরানীর চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়ান। এর বাইরে ক্ষমতার লাঠিয়াল হিসেবে যারা ছাত্র রাজনীতির পদ-পদবী দখলে রাখতে পারে তারা রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়, বিসিএসও উৎরে যায়। এসব কারণেই ছাত্ররাজনীতি অনেক বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠছে।

ক্ষমতায় টিকে থাকতে, নিরাপদ থাকতে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে। পড়ালেখা শেষে নিজেদেরটাও বুঝে নিতে পারছে। একদিকে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে প্রতি বছর একটি তরুণ প্রজন্ম হতাশা ও দুর্দশার মধ্যে রয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের জাগতিক ভোগ বিলাসে তরতর করে উপরে ওঠার যে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তারই শিকার হয়েছেন আবরার।

আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পচন ধরেছে। ঘুনপোকা জায়গা করে নিয়েছে আমাদের অন্দরমহলে। মত প্রকাশের কারণে কাউকে হত্যা করে নিশ্চয়ই আমরা সভ্য জাতি হিসেবে দাবি করতে পারি না।

আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া সমাজ, সামাজিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন কখনও এ দায় নেবে না। কথিত বিবৃতি আর বহিষ্কারের মোড়কে তারা থাকবে নিষ্পাপ।

ক্রমবর্ধমান অপরাধের বিষক্রিয়া আমাদের অনুভূতিগুলোকে ভোতা করে দিয়েছে। আমরা যত্রতত্র লাশ দেখি, সংখ্যায় হিসাব করে তাদের সর্বশেষ তালিকায় চোখ বুলাই। সম্ভাবনাময় মানুষগুলোকে কালো চাদরে মোড়ানো বীভৎস অন্ধকার লাশে পরিণত করে, তখন কিছুই না করতে পারার অক্ষমতা ঢাকতে আমরা তা পচনের আগেই দাফন করি।

আমাদের অক্ষমতা ক্ষমার অযোগ্য, অথচ কিছুই করার নেই। বিশ্বজিতের বিচার পেতে এখন তাকেই এসে আদালতে খুনিদের দেখিয়ে দিতে হবে। কালো কাপড়ে ঢাকা বিচারিক বিবেক জাগে না, তার সামনে শিকারি ডাক্তার, পুলিশের লেখা ইতিহাস। সেখানে দেখানো হয়েছে হাসিমুখে খুনিদের বের করে দেওয়ার নানা গুপ্তপথ।

একদিন বিচার পেতে হয়তো আবরারকেও কবর থেকে উঠে আসতে হবে। ২০১১ নম্বর টর্চার সেলে ঘাতকরা তার ওপর নির্যাতন করেছে, না সে নিজেই নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে তা আদালতকে বলতে হবে। সে পর্যন্ত এ আমার এ তোমার পাপ বয়ে বেড়াতে হবে জাতিকে।

 
Electronic Paper