ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেষ পরামর্শ রাখল না বাণিজ্যিক ব্যাংক

আমানত-ঋণের সুদহার কমানো

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৮, ২০১৯

সুদহার কমাতে শেষ ‘পরামর্শ’ও রাখল না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এখনো ঋণ বিতরণে ৩২ বাণিজ্যিক ব্যাংক ১০ শতাংশের ওপর সুদহার হাঁকাচ্ছে। আর আমানত সংগ্রহে ৭ শতাংশের ওপর বেশি সুদ নিচ্ছে ১৫ বাণিজ্যিক ব্যাংক। আমানত সংগ্রহে ৬ শতাংশ ও বিতরণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে চার দফার শেষ দফায় জুলাইয়ের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশ ব্যাংকই সুদ নির্ধারণের পরামর্শ কার্যকর করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ঋণ বিতরণে সুদ হার ১২ শতাংশের ওপর এমন ব্যাংকের সংখ্যা ছয়টি। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশে; এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ঋণ বিতরণে সুদ নিচ্ছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহ করছে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ সুদে; মিডল্যান্ড ব্যাংক বিতরণ করছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, আমানত সংগ্রহ করছে ৮ দশমিক ১ শতাংশে; ইউনিয়ন ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশে, আমানত সংগ্রহ করছে ৯ শতাংশের ওপর সুদে; এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক বিতরণ করছে ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশে, বিতরণ করছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে এবং মধুমতি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ সুদহারে আর আমানত সংগ্রহ করছে ৮ শতাংশ সুদহারে।

সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়ে সুদহার কমাতে পারে না, পরামর্শ বা প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটাই করেছে।

এর চেয়ে বড় কথা হলো বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করেনি। এর জন্য তারা সরকারের কাছে থেকে সুবিধাও নিয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুদ হারের ৯/৬ পরামর্শ মানতে গিয়ে আমানত হারিয়েছে। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষতি হয়েছে।

ব্যাংক খাতের নেতারা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বারবার সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিতরণে সুদহার ৯ শতাংশ ও আমানতে সুদহার ৬ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকের মালিক ও প্রধান নির্বাহীরা এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যাংকেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের এক্সিম ব্যাংক ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করেছে। আর আমানত সংগ্রহ করেছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার ব্যাংকের বিতরণ করা হয় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশে। আর আমানত সংগ্রহ করা হয় ৭ দশমিক ১২ শতাংশ সুদহারে।

এর বাইরে আরও যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ বিতরণে ১০ শতাংশের বেশি সুদ নিচ্ছে সে সব ব্যাংক হচ্ছে, বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ও ব্যাংক আল ফালাহ। দেশি বাণিজ্যিক এবি ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এসবিসি ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংক।

সুদহারের এই পরামর্শ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়ার দাওয়াই বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আমানত এমনিতেই সঞ্চয়পত্রে চলে যাচ্ছে। ৬ শতাংশ নিচে কার্যকর করলে যেটুকু আমানত এসেছে এটুকুও আসত না। ৯/৬ পরামর্শ কার্যকর হলে ব্যাংক খাত আরও তারল্য সংকটে নিপতিত হতো।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বলছেন, তুলনামূলক আমানতের হার কম আর ব্যাংকের সংখ্যা বেশির পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের কারণে আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যে ব্যাংক যত বেশি সুদ হার দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। এতে সুদের হারও বেড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছা করলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতে সুদহার কমাতে পারছে না।

ব্যাংক খাতের সূত্রটি জানায়, অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকে বড় অঙ্কের পুরনো গ্রাহক আমানত চলে যেতে চাইলে ব্যাংক ফেরত দিতে পারছে না। বা কৌশলগত কারণে ওই গ্রাহককে হাত ছাড়া করতে চাইছে না, বেশি সুদহার দিয়ে আমানত ধরে রাখছে। এই বেশি সুদহারের প্রভাব গিয়ে পড়ছে ঋণ বিতরণে।

এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুদহার কমাতে বারবার নির্দেশনা ও অনুরোধ এবং ব্যাংক মালিকদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তা প্রতিপালন হচ্ছে না।

 
Electronic Paper