ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শুভ বিজয়া দশমী আজ

সম্প্রীতি অটুট থাকুক

সম্পাদকীয়-১
🕐 ১০:০০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৭, ২০১৯

বিজয়া দশমী আজ। বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। পুরাণমতে, ‘দুর্গম’ নামক এক অসুর ছিল। তার কাজ ছিল সৃষ্টিকুলকে দুর্গতিতে ফেলা। সেই দুর্গম অসুরকে বধ করায় দেবীর নাম হয়েছে দুর্গা। দুর্গমকে বধ করে যিনি স্বর্গ থেকে বিতাড়িত দেবতাদের হৃত রাজ্যে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবজগৎকে চিরকাল দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। ভারতবর্ষের বাঙালি হিন্দু মানসে দুর্গা প্রতিবাদের দেবী, প্রতিরোধের দেবী। একই সঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’ ও ‘শক্তিরূপেণ’।

ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় সার্বজনীন দুর্গাপূজা শুরু হয়। মূলত দেবী দুর্গার প্রতিরোধের চেতনা মাথায় রেখেই দেশমাতা বা মাতৃভূমির জাতীয়তাবাদী ধারণা বিপ্লবের আকার নিয়েছিল। দেবী দুর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আনন্দ মঠ উপন্যাসে ‘বন্দে মাতরম’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন, যা পরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। সুভাষচন্দ্র বসুর মতো বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী নেতারা এই সার্বজনীন পূজার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন।

ব্রিটিশবিরোধী মন্ত্রে উদ্দীপ্ত কাজী নজরুল ইসলাম এই দেবীকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা, যার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে আটক করে জেলে পুরেছিল। দুর্গাকে উদ্দেশ করে নজরুল লিখেছিলেন, দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা/দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা/‘ময় ভুখা হুঁ মায়ি’ বলে আয় এবার আনন্দময়ী/ কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি!

দুর্গা দেবীর সেই মাতৃরূপ ও শক্তিরূপ বাঙালি হিন্দু মানসে আজও সমুজ্জ্বল। তিনি কেবল সৌন্দর্য-মমতা-সৃজনের আধার হিসেবেই বিবেচিত হন না, তিনি অসহায় ও নিপীড়িতের আশ্রয় বলেও গণ্য হন। তার এক রূপ অসুরবিনাশী, আরেক রূপ মাতৃময়ী ভালোবাসার। শক্তি ও মমতার এ দুই শক্তির গুণেই তিনি দেবকুলের কাছে পরম পূজনীয় হিসেবে গণ্য হন।

মানবকুলের জন্য তিনি বহন করে আনেন মঙ্গলবার্তা। যেকোনো ধর্মের পরম প্রতীকের গুরুত্ব এখানেই যে, তা সব মানুষের মধ্যেই শুভবোধের সঞ্চার ঘটাতে সক্ষম। এটাই ধর্মীয় প্রতীকের সার্বজনীন তাৎপর্য।

শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল আরাধনার উপলক্ষই নয়, তা আনন্দ-মিলনের সুযোগও। সেই আনন্দ ধর্ম সম্প্রদায়ের গণ্ডি ছাপিয়ে সমাজের সবাইকে আবাহন করে। কাছে ডেকে নেয়। দুর্গোৎসব তাই দিনে দিনে হয়ে উঠেছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ সামাজিক উৎসব। এ বছর সারা দেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে সম্প্রীতির পরিবেশে দুর্গোৎসব উদ‌যাপিত হচ্ছে।

সবচেয়ে স্বস্তির কথা, পূজাকে কেন্দ্র করে এবারও কোথাও এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। সারা বছর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের এ ধারাবাহিকতা অটুট থাকুক আমরা সেটিই প্রত্যাশা করি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper