আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা: কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৭, ২০১৯
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ (২১) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। তদন্তে যারাই অপরাধী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।’
সোমবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের এ কথা বলেন।
বুয়েটে একজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখুন এটা আমি শুনেছি, এটা আমি জানি। একটু আগে পুলিশের আইজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাকে বলেছি, আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টা আলাপ করতে পারেন।’
তিনি বলেন, এ ঘটনায় যেই জড়িত হোক তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কেউ ছাড় পাবে না।
এদিকে এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছে। আটক দুই জনের মধ্যে রাসেল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আর ফুয়াদ বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতটুকু বুঝি, এখানে ভিন্নমতের জন্য একজন মানুষকে মেরে ফেলার কোনো অধিকার কারও নেই। কাজেই এখানে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তদন্ত চলছে, তদন্তে যারাই অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে, পারসোনালি আমি বলেছি- এখানে আমার কোনো ভিন্ন মত নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশ বিক্রিও তো বলে ফেলছে বিএনপি, তাই বলে বিএনপি নেতাদের কী আমরা মেরে ফেলব? কোনো আবেগ ও হুজুগে কারা (আবরার ফাহাদকে হত্যা) করেছে, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই তদন্ত চলছে।’
এর আগে, রোববার (৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় রাসেল ও ফুয়াদ নামে দু'জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। সকালেই তাদের আটক করা হয়। আটক রাসেল ও ফুয়াদ বুয়েটেরই শিক্ষার্থী।
সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবরার লেখালেখি করতেন। এ কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের লেভেল-২ এর টার্ম ১-এর ছাত্র ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।
এদিকে পুলিশ ও তার পরিবার বলছে, ফাহাদের গায়ে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল।
নিহত ফাহাদের মামাতো ভাই জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ফাহাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। সে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিল। গতকালকেই বিকালে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হলে ওঠে। তারপর মধ্যরাতে খবর পাই ভাই মারা গেছে।
এদিকে হল প্রভোস্ট মো. জাফর ইকবাল খান জানান, রাত পৌনে ৩টার দিকে খবর পাই এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি। পরে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাকে পরীক্ষা করা হয়। ওই চিকিৎসক জানান তিনি বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চকবাজার থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন জানান, রাত পৌনে ৩টার দিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ আমাদের ফোন করে বিষয়টি জানায়। পরে আমরা গিয়ে শেরেবাংলা হলের বাইরে নিচতলা থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে আসি।
নিহতের শরীরে আঘাত কোনো অস্ত্রের নয়। কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সহপাঠীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।