তরুণদের ঘিরে আশা-নিরাশা
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ১:২২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে খেলে যাচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই পঞ্চপাণ্ডবকে ঘিরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট পেয়েছে সাম্প্রতিককালের প্রায় সব সাফল্য। নতুন করে যারা জাতীয় দলে ঢুকছেন তাদের পারফরম্যান্স গ্রাফটা ক্রমেই নিম্নমুখী। সবমিলিয়ে একটা অশনি সংকেতের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন উঠছে পঞ্চপাণ্ডবের যোগ্য উত্তরসূরি কারা?
প্রশ্ন ওঠাটা একেবারেই অমূলক নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার মতো উপযুক্ত ক্রিকেটার খুঁজে পাচ্ছেন না নির্বাচকরা। নেপথ্য কারণ দুর্বল পাইপলাইন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে যাদের ঘিরে প্রত্যাশার বেলুন উড়ছে তারাও নির্বাচকদের মন ভরাতে পারছেন না। তাদের কাছে আরও বেশি কিছু চাইছেন নির্বাচকরা। তবেই খুলবে তরুণদের স্বপ্নের জাতীয় দলের দরজা। সাম্প্রতিককালে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মতো দুজন ক্রিকেটারকে ঘিরেই আলোচনা বেশি হয়েছে। তাদের একজন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও সাইফ হাসান। ‘এ’ দল, হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দল, ইমার্জিং দল বা বিসিবি একাদশের হয়ে নিয়মিত রান করলেও জাতীয় দলে সুযোগের জন্য যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশের ওপেনিং সমস্যা অনেক দিনের পুরনো। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল পাচ্ছেন না তার যোগ্য সঙ্গী। যাকে ঘিরে এত ভরসা ছিল সেই তামিমও কয়েক মাস ধরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। মাস দুয়েক আগে তো নির্বাসনেও গিয়েছিলেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে ভারত সফরে বাংলাদেশ দলে ফিরবেন তামিম। অগ্নিপরীক্ষার ওই সফরের আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগ দিয়েই প্রস্তুত হতে চান তিনি। শুধু তামিম একা নন, দলের অন্য ক্রিকেটাররাও দীর্ঘ পরিসরের ঘরোয়া এই ক্রিকেট দিয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে চান।
ভারত সফরে যাক পাওয়ার জন্য এবারের জাতীয় লিগ তরুণদের পরীক্ষার জন্য সম্ভাব্য সেরা মঞ্চ। সব ছাপিয়ে ইয়াসির ও সাইফের দিকেই স্পট লাইটটা বেশি থাকবে। দুজনই অনেকদিন ধরে জাতীয় দলের আশপাশে আছেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক হতে পারছেন না একজনও। তাতে দুজনের অপেক্ষা যেমন দীর্ঘায়িত হচ্ছে তেমনি প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না বাংলাদেশ দলের। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এই মানিকজোড়ের ওপর আলাদাভাবে নজর রাখছেন নির্বাচকরা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই খেলে যাচ্ছেন সাইফ ও ইয়াসিন। প্রথমজন ইতোমধ্যে খেলেছেন দুটি যুব বিশ্বকাপ। একটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অবশ্য দুজনের পারফরম্যান্স নির্বাচকদের একবার ভাবিয়ে তুলেছিল। সেটা অবশ্য সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য। যদিও কার্যত দীর্ঘ পরিসরের দল গঠন নিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে নির্বাচকদের।
কদিন আগেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ভারত সফর করে এলেন দুজন। সেখানে চারটি একদিনের ম্যাচে সাইফের রান ছিল ২৭, ৭, ৬৪ ও ১২। ইয়াসিরের পারফরম্যান্স ছিল আরও হতাশাজনক- ১, ৫, অপরাজিত ৭ ও ৬। তার আগে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে দুজন খেলেছেন শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে। সেই সিরিজে বেশ রান করেছিলেন সাইফ। তিনটি একদিনের ম্যাচে করেছিলেন ৫০, ২৭ ও ১১৭। ইয়াসির এক ম্যাচে খেলেছিলেন ৫ ছক্কায় ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। কিন্তু অন্য দুই ম্যাচে রান ছিল ০ ও ৯। লঙ্কানদের বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচের সিরিজেও হাসেনি তাদের ব্যাট। তিন ইনিংসে সাইফের রান ছিল ১৮, অপরাজিত ৪০ ও ৪। ইয়াসিরের রান ৪, ৩ ও ০।
সাইফ এবং ইয়াসির- দুজনের পারফরম্যান্স নিয়ে নির্বাচক ও ম্যানেজার হাবিবুল বাশার সুমনের মূল্যায়ন, ‘সত্যি বলতে, আমাদের ভাবনায়ও ওরা দুজন জাতীয় দলের কাছাকাছি। তবে এই ম্যাচগুলোয় পারফরম্যান্স খুব সন্তোষজনক নয়। সাইফ অবশ্য খুব খারাপ করেনি। ভারতে ‘এ’ দলের হয়ে ভালোই করেছিল। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছে একটি। পরে আবার রান করেনি। ভারতে গিয়ে ১০০ ও ৬০ করেছে। ইয়াসির যখন এলো, খুব ভালো করে এসেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ওর ৮৫ রানের ইনিংসটি ছিল আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু পরে আর রানই করছে না। এভাবে একজন ক্রিকেটারকে বিচার করা কঠিন।’
হাবিবুল জানিয়ে দিলেন জাতীয় দলে আসতে হলে ব্যাট হাতে রানের বন্যা বইয়ে দিতে হবে, ‘অবশ্যই যথেষ্ট করছে না ওরা। আমাদেরকে বাধ্য করতে পারছে না জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করতে। আরও অনেক রান চাই ওদের কাছে। আরও ধারাবাহিক হতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাওয়ার আগে এই সব পর্যায়ে অনেক রান করতে হবে। যত বেশি সম্ভব করতে হবে। যেটা ওরা করতে পারছে না।’