অক্সফোর্ড ডিকশনারির পথচলা
ইশতিয়াক মাহমুদ
🕐 ২:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৪, ২০১৯
১৮৫৭ সাল; ইংল্যান্ডের ভাষাতত্ত্ববিদগণ (Philological Society of London) দেখলেন, ইংরেজি ভাষার ডিকশনারিগুলো অসমাপ্ত, ত্রুটিপূর্ণ এবং অপর্যাপ্ত। ফিলোলজিক্যাল সংঘের সদস্যরা একটি নতুন, পরিপূর্ণ ও পরীক্ষিত ইংলিশ ডিকশনারি তৈরি করতে চাইলেন। কিন্তু সে সময় তাদের মনে হয়েছিল, তারা এক অলীক উচ্চাকাক্সক্ষী স্বপ্ন দেখছেন। তারা তখনো ভাবতে পারেননি, তাদের এই ছোট্ট উদ্যোগ একদিন তাদের স্বপ্নের মতোই বৃহদাকার ধারণ করবে। প্রথমদিকে এই নতুন ডিকশনারি প্রণয়নের কাজ ফিলোলজিক্যাল সোসাইটির হাতে ধরে খুবই ধীর গতিতে চলছিল। এরপর ১৮৭৯ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের সঙ্গে ফিলোলজিক্যাল সোসাইটি একটি চুক্তি করে এবং জেমস মারির নেতৃত্বে ডিকশনারি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।
নতুন ইংলিশ ডিকশনারিকে চার খণ্ডে, ৬,৪০০ পৃষ্ঠায় ভাগ করার কথা ভাবা হয়; যেখানে মোটামুটি ১১৫০ সালের পর থেকে ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত সমস্ত শব্দ অন্তর্ভুক্ত হবে। পাশাপাশি সেসময় নতুন যেসব শব্দ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়।
ভাষাতত্ত্ববিদগণ এই নতুন ডিকশনারি প্রণয়নের কাজ ১০ বছরে শেষ করার জন্য ছক কষে মাঠে নেমে পড়েন। পাঁচ বছর অতিক্রম করার পর মারি এবং তার দল দেখলেন, তারা সবে ‘ant’ শব্দে এসে পৌঁছেছেন। ডিকশনারি প্রণয়নের কাজ যে পরিকল্পিত সময়ে শেষ হবে না- এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু কাজ যে বড় বেশি শ্লথ গতিতে চলছে! মারি এবং তার সতীর্থরা দমে না গিয়ে ডিকশনারিতে নতুন নতুন শব্দ অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি পূর্বে অন্তর্ভুক্ত করা শব্দগুলো নিয়েও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে ১৮৮৪ সালে মারি এবং তার দল ডিকশনারির প্রথম খ- প্রকাশ করেন। কিন্তু স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছিল, ফিলোলজিক্যাল সোসাইটি যে ডিকশনারি প্রণয়নের স্বপ্ন দেখেছিল সেটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আরও বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর সাধনার প্রয়োজন। তারা কাজটিকে যতটা কঠিন ভেবেছিলেন সেটি আসলে তার থেকেও অনেক বেশি কঠিন। ডিকশনারিটি হওয়ার কথা ছিল চার খণ্ডে, ৬,৪০০ পৃষ্ঠায়। কিন্তু যা হলো সেটা এর চেয়েও অনেক বেশি সমৃদ্ধ।
নতুন ডিকশনারিটি ৪ লাখ শব্দসমষ্টি (Phrase) ও শব্দসংবলিত দশ খণ্ডের বিশাল আকারে প্রকাশিত হলো। নাম দেয়া হলো ‘A New English Dictionary on Historical Principles’। এই ডিকশনারি ধীরে ধীরে ইংরেজি ভাষার প্রধান এবং চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ (Ultimate authority) হয়ে উঠল। দশ খণ্ডের ডিকশনারি প্রকাশ করেই দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি ভাষাতত্ত্ববিদরা।
ক্রেইগি ও অনিয়নস, এই দুই সম্পাদক ডিকশনারি প্রণয়নের কাজ শেষ হওয়ার পরেও ডিকশনারি হালানাগাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা ১৯৩৩ সালে একখণ্ডের Supplement (ক্রোড়পত্র) প্রকাশ করেন। প্রায় একই সময়ে মূল ডিকশনারি ১২ খণ্ডে পুনঃমুদ্রিত হয় এবং নতুন নাম নেয় ‘Oxford Dictionary English; যে নামে সারা পৃথিবীর কাছে সুপরিচিত। ১৯৫৭ সালে রবার্ট বার্চফিল্ডের সম্পাদনায় একটি নতুন ‘Supplement’ প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের অনেক শব্দ যুক্ত হতে থাকে অক্সফোর্ড ডিকশনারির শব্দভাণ্ডারে। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয় ‘Supplement’ এর আরও চার খণ্ড।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রিন্ট মিডিয়াবিমুখ হয়ে উঠল, ইলেকট্রিক মিডিয়ার ব্যাপক প্রচলন শুরু হলো। অক্সফোর্ড ডিকশনারিরও যুগে সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজন হলো। ১৯৮৪ সালে অক্সফোর্ড ডিকশনারিকে কম্পিউটারাইজড করার জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস এক নতুন প্রজেক্ট হাতে নিল। পাঁচ বছরের নিরবচ্ছিন্ন কাজের পর ১৩.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে পুরো অক্সফোর্ড ডিকশনারিকে কম্পিউটারাইজড করা হলো।
জন সিম্পসন, এডম- ওয়েইনার এবং তাদের দল অক্সফোর্ড ডিকশনারির এই নতুন ভার্সনকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করলেন। এই ভার্সনে নতুন করে যুক্ত হলো পাঁচ হাজার নতুন শব্দ। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হলো অক্সফোর্ড ডিকশনারির এই নতুন সংস্করণ, যা অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির দ্বিতীয় সংস্করণ। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হলো অক্সফোর্ড ডিকশনারির সিডি-রম এডিশন।
জেমস মারিদের স্বপ্নের ডিকশনারি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেল মাত্র ১৫০ পাউন্ড ওজনের একটি ডিস্কে করে।
এতটুকু কাজ শেষ দিয়েও অক্সফোর্ড ডিকশনারির কর্তাব্যক্তিরা বসে থাকেননি। ডিকশনারিকে সময়োপযোগী করতে তৈরি হয়েছে অনলাইন সংস্করণ।