ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আমারে নিবা মাঝি!

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৯:৪২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০২, ২০১৯

মীর কাশেমের মৃত্যুদণ্ডের পরে বীর সাঈদ ‘রাজাকার ভবন’ দখল করে। মীর কাশেমের কর্মচারীদের ভবন থেকে বের করে দিয়ে বীর সাঈদের কর্মচারীরা সেখানে অবস্থান নেয়। বীর সাঈদ ঘোষণা করে, ভবনকে শত্রুমুক্ত করা হয়েছে; এবার একে সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে।

রাজাকার ভবনে গড়ে ওঠে ক্যাসিনো, ইয়াবা বার। পার্শ্ববর্তী ক্যাসিনো ও ক্লাবগুলোতে প্রাণের সঞ্চার করতে ‘রাজাকার ভবনে’ জমে ওঠে চামেলি বার। ভবনের ভাড়াটিয়াদের নির্দেশ দেওয়া হয়, আপনারা আগে মানবতাবিরোধীদের ভাড়া দিতেন; এখন থেকে মানবতাবান্ধবদের ভাড়া দেবেন। বীর সাঈদের ক্যাডাররা বেরিয়ে পড়ে এলাকার মাংসের কারবারি থেকে রিকশাচালক ও দোকানি প্রজাদের কাছ থেকে ‘মানবতা কর’ আদায়ে। যারা মানবতা কর দিতে রাজি হয় না; তাদের তুলে আনা হয় ‘রাজাকার ভবনে’।

বীর সাঈদ তার অফিস কক্ষে কর্মক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলে সামনের চেয়ারে এসে বসে মীর কাশেম। বীর সাঈদ ঘুম থেকে জেগে বলে, ওরে রাজাকার তুই এখনো মরস নাই! মীর কাশেম প্রশান্তির হাসি হেসে বলে, বাবা সাঈদ আমি তোমার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। তুমি এক কাজ করো দেখি, একটা টর্চার সেল খোলো। যে সব বেয়াদব প্রজা চাঁদা দিতে রাজি হয় না; তাদের টর্চার সেলে রাখলেই দেখবে কাজ হয়ে যাবে। মীর কাশেম বীর সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে দেখিয়ে দেয় টর্চার সেলের সম্ভাব্য জায়গা। হাতে কলমে শেখায় কীভাবে মানুষকে নির্যাতন করতে হবে তার কায়দা-কানুন।

মীর কাশেম ফিরে গেলে বীর সাঈদের এক সহযোগী বলে, ভাই আপনারা দুইজন একসঙ্গে ঘুরলে আপনাকে চিনতে কষ্ট হয়। আপনি শুধু গোঁফটা ফালাইয়া দেন। দাড়ি যেমন আছে তেমনই থাকুক। একদিন এক দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী চামেলি বারে ঘুরতে এসে সবাইকে বোঝায়, এ ভবনটাকে রাজাকার ভবন বলা ঠিক নয়। রাজাকারের কবর রচিত হয়েছে। এই ভবনের অন্য নাম চাই।

চামেলি তার এলো চুল মুখের ওপর থেকে ঝাপটা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে, যারা রাজার আকার ধারণ করে; তারাই রাজাকার। টর্চার সেল থেকে নির্যাতনের রাক্ষুসে শব্দ ভেসে আসে। চামেলি বারের আইটেম নাম্বারের হৈ চৈ-এ চাপা পড়ে যায় নির্যাতিতের কান্না। ক্যাসিনোতে বালিশ-ওয়ালা, বালিশের কাভার-ওয়ালারা তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে আসে। বালিশ বসন্তের দুরন্ত সহিসেরা মুখে সিগেরেট জ্বালিয়ে কার্ড গোছাতে থাকে। পেছন থেকে চামেলি দেখে নেয় কার্ডগুলো। সংকেতে সংকেতে খদ্দেরকে জানিয়ে দেয় অন্যদের হাতে কী কী কার্ড আছে; সে খবর।

এক বালিশওয়ালা হারতে হারতে নিঃস্ব হয়ে বলে, এইখান থিকা জিইতা ফিরতে পারলাম না কোন দিন। বীর সাঈদের এক বাউন্সার বালিশওয়ালার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, ভদ্রভাবে যাইবেন; নাকি টর্চার খাইবেন! ওদিকে টর্চার সেলে আহত এক যুবক বলে, এই ‘রাজাকার ভবনে’ আমার আব্বারে ধইরা আইনা পিটাইয়া চাঁদা নিছিলো; আপনারা আবার আমারে ধইরা আইনা পিটাইয়া চাঁদা নিতেছেন; এইটা কী স্বাধীন দেশ; এই কী তার নমুনা!

বীর সাঈদের খামবন্ধু বুদ্ধিজীবী টর্চার সেল ঘুরতে এসে এ প্রশ্ন শুনে বলে, এই তো শত্রু চিহ্নিত করা গেছে; সে মানবতাবিরোধী মীর কাশেমের সঙ্গে মানবতা-বান্ধব বীর সাঈদের তুলনা করতেছে; ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড। কিন্তু বীর সাঈদ একটু চিন্তায় পড়ে যায়। নিজ দপ্তরে ফিরে বসে বসে ভাবে তার পরিণতিও কী মীর কাশেমের মতোই হবে! মীর কাশেম সামনের চেয়ারে বসে খুক খুক কাশে, এতো চিন্তা কইরো না বাবা। আমার বিচার হইতে চল্লিশ বছরের বেশি লাগছে! তোমার তো সবে কলির সন্ধ্যা। আর উন্নত দেশে সেকেন্ড হোম বানাও। আমরা যারা দেশ আর দেশের মানুষরে নিয়া জুয়া খেলি; তাদের কাছে দেশ হইতেছে টাকা বানানোর মেশিন। মীর কাশেমের পরামর্শে মনে চাঙ্গাভাব চলে আসে বীর সাঈদের। লন্ডনে ফোন করে কথা বলে ‘সেকেন্ড হোম’ বিশেষজ্ঞ এক দেশপ্রেমিক নেতার সঙ্গে। সে খুশির খবর দেয়, ভাইডি আমরা দেশপ্রেমিকেরা লন্ডন শহর প্রায় পুরাটাই কিইনা ফাইলাইতাছি। হেইদিন এক ব্রিটিশ সাহেব কইলো, দেশপ্রেমিকদের রাজধানী আসলে লন্ডন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দেশপ্রেম বেচাবিক্রি কইরা টেকাটুকা শেষ পর্যন্ত লন্ডনে পৌঁছায়। ব্রিটিশ অর্থনীতিতে আমরা যে অবদান রাখলাম; হয়তো একদিন এরা আমগো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুরন্ত সৈনিক হিসাবে পদক দেবে।

ফোনে কথা বলা শেষ করতেই চামেলি খিল খিল হাসিতে এলোচুলে প্রবেশ করে, কই পালাইবার শলা করতেছো! আমারে নিবা মাঝি!

মাসকাওয়াথ আহসান
প্রবাসী সাংবাদিক

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper