ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বউবাজারের অন্দরে

শফিক হাসান
🕐 ২:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০১, ২০১৯

খেলতে খেলতে খেলোয়াড় না হয়ে কলিমুদ্দিন দফাদার হয়ে উঠল জুয়াড়ি! উত্তরণে বাবার ভূমিকাই বেশি। আদরে বাঁদর বানিয়েছেন, শেষে মাথায় চেপে বসলে নামাতে পারলেন না। বাবার সাড়ে ছয় তলার বাড়ির গরবে পড়াশোনা বা অর্থকরী কাজ কোনোটাই করা হয়ে ওঠেনি তার। অফুরন্ত সময়ে হাত পাকিয়েছে জুয়াখেলায়। বাবা-মা ভাবলেন, বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ‘গাঞ্জুডি-জুয়াড়ি’ ছেলের জন্য বউ মিলল না। সবার চোখ উপরে- ঘুষখোর চায় আরও বড় ঘুষখোরের সঙ্গে সম্বন্ধ পাতাতে, কালোবাজারির চাহিদাও অভিন্ন! হাতেগোনা সৎ মানুষের কাছে বাড়িওয়ালা পরিচয় মূল্যই পেল না।

সলিমুদ্দিন দফাদারকে শেষপর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে দৌড়াতে হলো। গ্রামের অত হিসাব-নিকাশ জানে না। শেষমেশ যেখানে স্থিত হলো, হবু বেয়াইনের শখ ঢাকায় গিয়ে চিড়িয়াখানায় পশুপাখি দেখার। শখের কারণেই তিনি একপায়ে খাড়া। সলিমুদ্দিন আশ্বাস দিলেন- ‘চিড়িয়াখানা থেকে যে কোনো পশুপাখি আপনাকে কিনেও দিতে পারব!’

শেফালির মা খুশি হয়ে জানালেন, অনেক পশুপাখি কিনবেন। শেষে বোধোদয় হলো, বাঘ-ভাল্লুক-সাপ পালতে পারবেন না! মহানন্দে বিয়ে হয়ে গেল। দুই সপ্তাহ না পেরোতেই পাত্রীপক্ষ বুঝে গেল, পশুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে ঘরেই! কলিমুদ্দিনকে আরও নেশায় পেয়ে বসল। বাবা টাকা দেওয়া বন্ধ করলে সে দ্বিতীয় বাবা, শ্বশুর আব্বাকে ধরল। ব্যবসা করবে, প্রচুর টাকা লাগবে- জামাইয়ের আবদারে শ্রমজীবী শ্বশুর অবাক হলেন। বড় শহরে বসবাসকারী ছেলে গ্রাম থেকে টাকা নেয় এমনটি কখনো শোনেননি। গাছপালা, গেরস্তির ফসল বিক্রির পর দুই দফায় ফসলি জমিও বন্ধক রাখতে হলো। তাতেও ব্যবসা দাঁড়াল না জামাইয়ের। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘চাল-ডালের দোকান দাও কোথাও!’

জামাই বলল, ‘ছোট ব্যবসা করতে পারব না। আমার খান্দানি ব্যবসা!’
‘কী সেটা?’
‘জুয়া! জুয়া খেলতে খেলতে ব্যবসা শিখেছি। টাকা পেলে জুয়া দিয়েই বাজিমাত করব!’

জামাইয়ের আসল পরিচয় পেয়ে হাত থেকে খসে পড়ল মোবাইল ফোন। ব্যাটারি খুলে ছিটকে পড়ল চৌকির নিচে। ক’দিন ফোন বন্ধ থাকায় তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলেও প্রভাব গিয়ে পড়ে শেফালির ওপর। প্রতিদিনই মার খেতে হয় তাকে। কলিমুল্লাহ হাত-পা চালাতে চালাতে বউকে বলে, ‘তোর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়। জুয়ার আসরে আমার মানসম্মান থাকছে না!’

‘জুয়াড়ির মানসম্মান!’ শেফালির এমন বিস্ময় প্রকাশে খিস্তিখেউড় বাড়ল আরও। মেয়ের দুঃসময়ে বাবা এলেন ‘সরেজমিন তদন্তে’। সলিমুদ্দিন লজ্জায় বেয়াইকে মুখ দেখালেন না। ভাড়াটিয়ারাও তার দিকে অপাঙ্গে তাকাচ্ছে। ‘অগ্রিম ভাড়া’র কথা বলে কলিমুল্লাহ সবার কাছ থেকেই সকাল-সন্ধ্যা টাকা নেয়; বাসার বউ-ঝির দিকে কুনজর দিতেও ছাড়ে না। মাস শেষে ভাড়ার টাকা যা আসে, তাতে বোঝা যায় জুয়ার খাত যথেষ্ট চাঙ্গা! দুঃখ-শোকে স্ত্রীর নামে বাড়ি লিখে দিয়ে অসময়েই মারা গেলেন সলিমুদ্দিন। কলিমুদ্দিন পরদিন মায়ের কাছে জুয়ার টাকা চাইল; না পেয়ে বাবার গোরস্তানের কাঁচামাটিতে লাথি মারতে মারতে এন্তার বকাবাদ্যি করল। শ্বশুরকে কল দিলে শুনতে হলো থানার হুমকি! একদিকে যৌতুকের কিস্তি বন্ধ, অন্যদিকে বাড়ছে দেনা। শোধ দিতে না পেরে একপর্যায়ে শেফালিকে বিক্রি দেয় সে। সহযোগী জুয়াড়ি আগেও কয়েকটা বউ কিনেছে। প্রক্রিয়া চলমান থাকায় শেফালি দ্বিতীয় ঠিকানাও হারাল দুই মাসের মাথায়। কীভাবে চলবে জীবন! ভাবতে ভাবতে পেয়ে যায় দিশা। পাইকারি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে বিক্রি শুরু করে। দেখাদেখি সমস্যাগ্রস্ত অন্য বউয়েরাও ব্যবসায় নামে। অস্থায়ী বাজার স্থায়ী রূপ পেলে বউবাজার হিসেবে পরিচিত হয়। বাজার সমিতির সভানেত্রী হয় শেফালি। কম দামে ভালো জিনিস পাওয়ায় ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ে।

জুয়ার আসরে কলিমুদ্দিনের দেনা পাহাড় ছোঁয়। ইতোমধ্যে ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে নাম ছড়ানোয় ‘জনপ্রিয়তা’ উপভোগ করে সে। জনপ্রিয়তার ঊর্ধ্বগতিতে একপর্যায়ে মা ত্যাজ্যপুত্র করেন তাকে। তাতেও দমেনি সে। মোবাইল ফোনে কাউকে প্রেমে জড়াতে পারলে বিয়ে হতে কতক্ষণ! একদিন বাজারে আলু-পটল কিনতে এসে কলিমুল্লাহ আবিষ্কার করে তার স্বত্ব ত্যাগ করা বউই বাজারটির প্রবর্তক! এ কথা গর্বভরে যাকেই বলতে যায়, ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দেয়! স্বীকৃতি আদায়ে বাজারের প্রবেশপথে খুঁটি গেঁড়ে সাইন বোর্ড বসায় কলিমুদ্দিন। বউবাজার : প্রবর্তক কলিমুদ্দিন দফাদার; প্রতিষ্ঠাতা : সাবেক বউ শেফালি বেগম! এ সাইন বোর্ডের কারণে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেকগুণে। কলিমুল্লাহ প্রবেশ করে জুয়া থেকে ক্যাসিনো-মদ-নারীর জগতে। দেরিতে হলেও পেয়েছে সরকারি দল-ঘনিষ্ঠ নেতাদের সন্ধান!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper