পবিত্র সম্পর্কগুলো বাজারি হয়ে উঠছে
খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১০:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
ঢাকার শ্যামলির ফুটওভারব্রিজে ভিক্ষা করতেন এক বৃদ্ধা। অনেক দিন ধরে একই এলাকায়। দুই থেকে তিন দিন আগে এক রাতের গভীর অন্ধকারে মিলিয়ে যায় তার জীবন। তার মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা জানতে পারেন, বেঁচে থাকাকালে আশপাশের বিকাশ করার একটা দোকান থেকে প্রায়ই বৃদ্ধা নিজের ছেলেকে টাকা পাঠাতেন।
যে মুঠোফোন নম্বরে টাকা পাঠাতেন বৃদ্ধা, সেই নম্বরে ফোন করে পুলিশ কর্মকর্তা জানালেন মৃত্যুর কথা। মুঠোফোনের অন্য প্রান্ত থেকে পুলিশ কর্মকর্তাকে জানানো হয়, তিনি বৃদ্ধার ছেলে হওয়া তো পরের কথা, মৃত নারীকে চেনেন-ই না।
প্রাণ চলে গেলে অন্য সব প্রাণির মতো মানুষের শরীর থেকেও দুর্গন্ধ ছড়ায়। ঢাকার মতো ভদ্রলোকদের নগরের রাস্তায় কোনো ভিখারির মরদেহ দুর্গন্ধ ছড়াবে, এটা কি মেনে নেবেন নাক উঁচু শহুরে বাসিন্দারা? ভিক্ষুক বৃদ্ধার উত্তরাধিকারী নেই, পয়সাওয়ালাদের মতো জায়গা কিনে কবরস্থ হওয়ার সম্পদও নেই। উপস্থিত পুলিশরা ভাবছেন, বৃদ্ধার মরদেহ বিনা খরচে দাফন করার জন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়া বা দাফন করার বিষয়ে। কিছু টাকার জন্য পুলিশের ভাবনা-চিন্তাও ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
মৃত বৃদ্ধার সঙ্গে কোমরে গোঁজা ছিল টাকাগুলো। ভিক্ষা করে জমানো। পুলিশ কর্মকর্তা ভাবলেন, যে মুঠোফোন নম্বরে বৃদ্ধা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন বলে দাবি করছেন দোকানি, সেই নম্বরে আবার ফোন করে খোঁজ নেওয়া যায়, বৃদ্ধার কোনো ওয়ারিশ আছেন কি-না, বা লোকটি কাউকে চেনেন কি-না। ওই নম্বরে আবার ফোন করে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পথে পড়ে থাকা বৃদ্ধার লাশের সঙ্গে বেশ কিছু টাকা পাওয়া গেছে। তার কোনো ওয়ারিশকে আপনি চেনেন-জানেন? কেউ থেকে থাকলে টাকাগুলো তাকে দেওয়া হবে।
তখন মুঠোফোনের ওপাশ থেকে আসে নতুন সুর- আমিই বৃদ্ধার ছেলে, তিনি আমার মা। আমি নীলফামারী আছি। ঢাকা আসতেছি, রওয়ানা দিলাম। যে ছেলেকে শহর, নগরের পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে টাকা পাঠাতেন, মৃত্যুর পরও সেই ছেলের মুখ থেকে মা স্বীকৃতির জন্যও টাকা লাগে! আমাদের চিরন্তন পবিত্র সম্পর্কগুলোও কি দিনে দিনে এমন বাজারি ও অমানবিক হয়ে উঠছে?
বি. দ্র. স্ট্যাটাসের তথ্যের উৎস এক পুলিশ কর্মকর্তা।
হাসান শান্তনু
সাংবাদিক
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228