সাক্ষাৎকার
শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সচেতন হতে হবে
ওয়ালিয়ার রহমান
🕐 ২:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
বাবার সঙ্গে রাগ করে মায়ের দেওয়া আংটি নিয়ে খালি হাতেই ঢাকা পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। ত্যাগ আর শ্রমের ঘামে পাল্টেছেন নিজের ভবিষ্যৎ। কাজের মাধ্যমে বদলে দিয়েছেন হাজারো তরুণের ভাগ্য। তিনি শা অ্যাসোসিয়েটসের সিইও সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী। বিদেশে উচ্চশিক্ষা, স্টুডেন্ট ভিসা, গাইড লাইন, ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন। লিখেছেন ওয়ালিয়ার রহমান।
দূতাবাসের চাকরি ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
চমৎকার। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, দূতাবাসে বারো বছর চাকরির অভিজ্ঞতাকে পারফেক্টলি কাজে লাগাতে পারছি।
এখন মূলত কানাডা এবং আমেরিকা নিয়ে কাজ করছি।
কীভাবে আসলেন এই পেশায়?
প্রথম কর্মজীবন শুরু করি ১৯৯৩ সালে রাশিয়া অ্যাম্বাসিতে প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে। এ সময় বিদেশগামী বাংলাদেশের মেধাবী তরুণদের দেখেছি খুব কাছ থেকে। গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি তাদের সমস্যাগুলো।
মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থীদের ভিসা পেতে সমস্যা হতো, অধরা থেকে যেত বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। তখন চিন্তা করলাম বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী তরুণদের জন্য কিছু করা উচিত। তাদের সমস্যাগুলো ধরিয়ে, সঠিক গাইড লাইন দিয়ে ক্যারিয়ার সচেতন করে তোলা উচিত। সেই ভাবনা থেকে গড়ে তুলি শা অ্যাসোসিয়েট।
কোন কোন ভিসার ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করতে স্বাছ্যন্দবোধ করেন?
আমার অফিস থেকে সাধারণত স্টুডেন্ট ভিসা এবং ইমিগ্রেন্ট ভিসা নিয়ে কাজ করা হয়। অন রিকুয়েস্ট কিছু ভিজিট ভিসার কাজও করি। এখন প্রত্যেকটি দূতাবাসই হার্ডলাইনে আছে। খুব যাচাই-বাছাই করে ওভার কনফার্মড হয়ে তারপর ভিসা প্রদান করা হচ্ছে।
আমরা প্রায় সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখি, আইইএলটিএস ছাড়া ভিসা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, এটা কি আসলে সত্যি?
কানাডা আমেরিকা অস্ট্রেলিয়াতে আইইএলটিএস ছাড়া ভর্তি এবং ভিসা পাওয়া দুটোই স্বপ্ন। কিছু কিছু দেশে হয়তো ইএসএল প্রোগ্রামের পর মেজর কোর্সে ভর্তি দেওয়া হয়, ভিসা দেওয়া হয় কি-না সেটা জানা নেই।
উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বিদেশ যেতে হলে বিদেশির মতো হতে হবে, তাকে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে, ইনফোরমেটিভ হতে হবে, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসে সক্রিয় থাকতে হবে। ধ্যানে জ্ঞানে স্বপ্নে নিজেকে কানাডিয়ান আমেরিকান অস্ট্রেলিয়ান ব্রিটিশ ভাবতে হবে। আপনি বিদেশ যাবেন, অথচ আইইএলটিএস করবেন না, টোফেল করবেন না; এটা হতে পারে না!
ভিসার ব্যাপারে স্পন্সর জটিলতায় আপনারা কি কোনো ভূমিকা রাখেন?
আমরা কিছু ব্যাংককে চিনি জানি, যারা ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা মোতাবেক এফডিআর করে দিতে এডুকেশন লোনের ব্যবস্থা করেন। ভিসার ক্ষেত্রে এই এফডিআর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিক্ষর্থীদের আপনার কোনো বিশেষ পরামর্শ?
প্রথমেই বলব, সোশ্যাল মিডিয়ার নেটওয়ার্ক থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ফেসবুক, ইউটিউবের নেশা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে প্রচুর বই পড়তে হবে; সোশ্যাল একটিভিটিস বেশি বেশি করতে হবে। ইংরেজির চর্চা করতে হবে। আপনি দেখেন, ঘরে বসে অনলাইনে কিছু রোজগার করতে গেলেও আপনাকে ইংলিশ জানতে হবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে প্রতারণার অভিযোগ শোনা যায়, এ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কীভাবে প্রতিকার পেতে পারেন?
আপনার সঙ্গে আমি একমত, এখনো অনেক ফার্ম মিথ্যা কথা, ফলস হোপ, ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। আইইএলটিএস ছাড়া ভিসা, পৌঁছার পর টাকা, নো ভিসা নো মানি, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি এইসব লোভনীয় চটকদার কথা বার্তা বলে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের আকৃষ্ট করছে। যে বিষয়গুলো ওদের কাছে সবচেয়ে দুর্বল, সেগুলোকেই তারা প্রতারণার অস্ত্র বানিয়ে সবাইকে বোকা বানাচ্ছে। যদিও এখন অনেকেই সচেতন হয়েছে। আপনি দেখেন, বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দৈনিক পত্রিকাগুলোতে দু-একটি ফার্মের বিজ্ঞাপন ছাড়া অধিকাংশ কনসালটেন্সি ফার্ম লাপাত্তা।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমার ফিউচার প্ল্যান হচ্ছে, একটা এপসের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষার যাবতীয় তথ্য সহজে ছাত্রদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। তারা মোবাইল ব্যবহার করবে, বাট সেটা যেন হয় ইনফর্মেটিভ, তার নিজের বেনিফিট! অযথা টিকটক, ফানি ভিডিও, অপ্রয়োজনীয় লেখালেখি করে সময় নষ্ট না করে প্রতিটা সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের ভবিষ্যৎকে পারফেক্টলি গড়ে তুলতে হবে।
আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলুন।
আমার একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে, সেকেন্ড ইয়ার স্টুডেন্ট। আমার একমাত্র মেয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গ্রেড সিক্সের ছাত্রী। আমার সহধর্মিণী আমার প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপদেষ্টা। যার কঠোর পরিশ্রম নিষ্ঠা ও ভালোবাসার কারণেই আজকের এই শা-এসোসিয়েটস। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে মোট তিনটি অফিস বাংলাদেশে, কানাডায় একটি।