ধানের রাজ্যে ‘ড্রাগন’ রাজা
সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর
🕐 ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
ধানের জেলা উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ বিদেশি ‘ড্রাগন’ ফলের চাষ হচ্ছে। এ ফল চাষ করে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। দিনাজপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের উপযোগী হওয়ায় বিস্তীর্ণ ক্ষেতজুড়ে শোভা পাচ্ছে বিদেশি এই ফল।
স্থানে স্থানে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে আরসিসি পিলারে (সিমেন্টের খুটি) পুরোনো টায়ারে জড়িয়ে থাকা গাছে ঝুলছে ড্রগন ফল। এই ফল চাষ করে অনেকে আশাতীত ফলনও পাচ্ছেন। ফল বিক্রি হচ্ছে ক্ষেত থেকেই। দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ সুগার মিলের কান্তা ফার্ম ১৫ একর ২৫ শতক জমিতে প্রথম ৪০ হাজার ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করে সফলতার দিকে এগিয়েছে। বাংলাদেশ চিনি শিল্পের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন (এফসিএমএ)-এর উজ্জ্বল সম্ভাবনার চিন্তা থেকেই ড্রাগনের চাষ শুরু হয়েছে।
বিরামপুরের কৃষক মতিয়ার জানান, দুই তিন বিঘা জমিতে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন চাষ করেছিলেন। ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার আরও দেড় বিঘা জমিতে সম্প্রসারণ করেছেন ড্রাগন ফলের চাষ।
দিনাজপুর সেতাবগঞ্জ সুগারমিল কাহারোল উপজেলার ৫নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের অধীন কান্তা ফার্মের সহকারী ব্যবস্থাপক খালেক মিয়া জানান, বাংলাদেশ চিনি শিল্পের চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের নির্দেশনা ও সম্ভাবনার পথ ধরেই সেতাবগঞ্জ সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক শামসুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ১৫ একর ২৫ শতক জমিতে ৪০ হাজার ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে।
দিনাজপুরের স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফল ৩০০-৫০০ গ্রামের বেশি ওজন হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনৈতিক চাহিদা মিটানো সম্ভব।
তিনি আরও জানান, দিনাজপুরের ড্রাগন ফল জেলার চাগিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন এই গাছ ও ফল দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষে সফলতার কাহিনী শুনে অনেকে ছুটে আসছে। আগ্রহ প্রকাশ করছেন এ ফল চাষের।
এদিকে, বছরের প্রায় সব মৌসুমেই ড্রাগন গাছে ফলন হওয়ায় বেকার কৃষকরাও ঝুঁকছেন ড্রাগন ফল চাষে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও অনাবাদি-পরিত্যক্ত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করছেন। কাহারোল উপজেলার কান্তা ফার্মে জমিতে রাতা ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। এমনটাই জানালেন চিনিকলের সিআইসি কাজল চন্দ্র দাস।
জানা যায়, চলতি বছর দিনাজপুরে ৭০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল স্থানীয় বাজারে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ফল চাষে কৃষককে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছেন হর্টি কালচার সেন্টার ও কৃষি বিভাগ।
দিনাজপুর হর্টি কালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, দিনাজপুরে মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী বলে কৃষিবিদরা জানাচ্ছেন। সুষ্ঠু বাজারজাতের ব্যবস্থা করা গেলে উদ্যোগী কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলে মনে করছেন তারা।