ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জাপার ভাগ্য নির্ধারণ আজ

শফিক হাসান
🕐 ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯

রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভাগ্য নির্ধারণের দিন আজ। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি এ আসনেই। দীর্ঘদিন যাবত এটি জাপার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবু এবার রাজনীতির হিসাব ভিন্ন। এরশাদ-রওশন দম্পতির পুত্র সাদ এরশাদকে এ আসনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে নানা দিক থেকেই দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব-বিরোধ। সম্পর্কে শীতলতা এসেছে দলের শীর্ষনেতাদের মধ্যে। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে আনকোরা সাদ এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। খোদ জাপাও সাদের জয়ের বিষয়ে সন্দিহান। রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং এরশাদের ভাতিজা এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার সাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ভালো চোখে দেখছেন না। ইতিপূর্বে সাদবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘শিশু’ ও ‘ভাড়াটিয়া’ হিসেবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে জাপার পক্ষ থেকে ‘দুর্বলতা’ তথা বাস্তব পরিস্থিতি স্বীকার করা না হলেও পরোক্ষভাবে সেটাই প্রকাশ পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় জাপার অভিমত, বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক মিত্র আওয়ামী লীগ যেন এ আসনে প্রার্থী না দেয়। তাতে জয়ের বিষয়ে এগিয়ে থাকা যাবে। ‘পথের কাঁটা’ বড় বাধার একটিকে সরিয়ে দেওয়া গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তুলনামূলক সহজ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শেষপর্যন্ত দলীয় প্রার্থী দেবে কি-না নাকি জাপাকে ছেড়ে দেবে আসনটি- ‘সমঝোতা’ হবে আজ সোমবারে। ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছিলেন, জাপা চাইলে আসনটি ছেড়ে দেবে সরকার। এদিকে জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা গতকাল রোববার আশা প্রকাশ করেছেন, রংপুর-৩ আসনে সমর্থন দেবে আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের যৌথ সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করে রাঙ্গা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে। রংপুরের এ আসন ১৯৮৬ সাল থেকেই জাপার। এরশাদও এ আসনে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন আগামী ৫ অক্টোবর। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, সাদের পক্ষে ইতোমধ্যেই রংপুরে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ শুরু হয়েছে। সাদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। অন্তত এক লাখ ভোট বেশি পেয়ে জাপাপ্রার্থী নির্বাচিত হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সমীকরণ যদি এতটাই সহজ হয় আওয়ামী লীগের ফেভার কেন চাইতে হবে রাঙ্গাকে! যে আসন পরিচিত দলের দুর্গ হিসেবে সেখানে আওয়ামী লীগের অনুকম্পার প্রয়োজন হবে কেন! কৌশলগত কারণে শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিতেও পারে। সেক্ষেত্রে ঘরের শত্রু বিভীষণকে কীভাবে মোকাবেলা করবে জাপা! কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির যে কোন্দল, ঘরোয়া বিবাদ থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

রসিক মেয়র মোস্তফা ইতিপূর্বে প্রশ্ন রেখেছেন, কে ভোট দেবে সাদকে। জাপা থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আসিফ শাহরিয়ার ও তার কর্মী-সমর্থকরা যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে চান সাদকে। দুই ভাইয়ের পারস্পরিক অনাস্থা, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে শেষপর্যন্ত দলকেই সমস্যায় ফেলবে।

আসিফের বিষয়ে গতকাল রাঙ্গা বলেন, জীবদ্দশায় এরশাদ তার ভাতিজা আসিফকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। তাই আসিফ এখন দলের কেউ নন। গত রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সামান্যসংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন। তাই এ উপ-নির্বাচনে আলোচ্য বিষয় নন আসিফ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ আসনে জাপার ভাগ্য নির্ধারণে প্রভাবকের ভূমিকা রাখতে পারে আওয়ামী লীগ। শক্ত এ প্রতিপক্ষ শেষপর্যন্ত পিছিয়ে এলে ‘এগিয়ে’ থাকবেন সাদ। তবুও লড়াই সহজ হবে না। মোকাবেলা করতে হবে আরো কয়েকজন প্রার্থীকে। সেই শক্তি-সামর্থ্য কতটা দেখাতে পারবে জাপা, নিজেদের দুর্গ কতটা ‘নিজেদের’ বোঝা যাবে তাও!

 
Electronic Paper