ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাবুই ও তালগাছ

কৌশিক সূত্রধর
🕐 ২:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯

মিনুদের ঘরটা বেশ পুরানো।এদিকে বৈশাখ মাস কোনদিন যে ঝড়ে ঘরটা উড়িয়ে নিয়ে যাবে! এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটে মিনুদের। মিনুদের বাড়ির সামনে পুকুরপাড়টিতে বহু বছর ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বয়স্ক তালগাছ।
মিনুর বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ মাসেই তালগাছটি কেটে নতুন করে ঘর তৈরি করবে।
তাল গাছটি বিষয়টা বুঝতে পেরে একদম হতাশ ও বিষণ্ন হয়ে গেলো।

একসময় তার মাঝে যখন অনেক তাল ফলতো তখন সবার কাছে তার কদরটা ছিলো অনেক বেশি।
কিন্তু এখন আর সেই কদরটা কারও মাঝে নেই। তাল গাছটি এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছে।
সে সারা জীবন বহু পাখিদের উপকার করেছে। তার মাঝে গর্ত করে ঠাঁই নিয়েছে অনেক কাঠঠোকরা পাখি।
একদিন সকালে হঠাৎ এক জোড়া বাবুই পাখি এসে তার মাথার উপর বসলো। কিছুক্ষণ পর পুরুষ বাবুইটা তাকে বললঃ বন্ধু তাল গাছ আমরা খুব বিপদে পড়ে তোমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি। সেদিন ঝড়ে আমরা যে গাছটিতে বাসা বেঁধে ছিলাম, সেটি ভেঙে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। তুমি কি আমাদের তোমার মাঝে থাকতে দেবে?
তাল গাছটি উদাস হয়ে চাপাস্বরে বলল, ঠিক আছে বন্ধু! তোমরা আমার মাঝেই বাসা বেঁধে থাকো।
আমাকে কেটে ফেলে তারা তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করতে চায়। জানো বন্ধু বাবুই আমি শুধু সারা জীবন অন্যের উপকার করেছি। কিন্তু কখনো কারও কাছে কোন উপকার পাইনি, পেয়েছি শুধু কষ্ট আর অবহেলা।
আমি যতদিন বেঁচে আছি তোমরা আমার কাছেই থাকো বন্ধু, এটা তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ। আমি খুব একা, তোমরা আমার শেষ দিনগুলো পাশে থাকলে আমি অনেক শান্তি পাবো। বাবুই পাখি দুটি কেঁদে কেঁদে বলল ঠিক আছে বন্ধু। আমরা তোমার সাথেই তোমার শেষদিনগুলো একসাথে কাটাবো।
এই বলে তারা গাছটিতে বাসা বেঁধে থাকতে শুরু করলো। তাল গাছটি বাবুই পাখি দুটির সঙ্গ পেয়ে বেশ আনন্দিত ছিল। কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন সকালে দড়ি, শাবল, কুড়াল, করাত নিয়ে কয়েকজন লোক এলো মিনুদের বাড়ি। তাদের দেখে তাল গাছটির সাথে বাবুই পাখি দুটিরও বুঝতে বাকি রইলো না, যে তারা কি কারণে এসেছে। এরপর তাল গাছটি একদম মনমরা হয়ে গেলো।এমন পরিস্থিতি দেখে বাবুই দুটিও কেঁদে ফেলল। গাছটি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো। শুধু নীরবে লোকিয়ে লোকিয়ে কেঁদে শেষ বিদায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। বাবুই দুটিও কেঁদে কেঁদে একে অপরকে বলতে লাগলো... আমরা অতি ক্ষুদ্র দুটি জীব। এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে পেরে উঠবো?
কীভাবে বাঁচাব আমাদের বন্ধুকে? তাল গাছটি করুণ কণ্ঠে বলল বন্ধু বাবুই দুঃখ করো না, হয়তো এটাই আমার নিয়তি। তোমরা জানো..? আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না, কারণ আমি নিজেকে বলি দিয়ে অন্যের উপকার করতে যাচ্ছি।আর এতেই আমি চির অমর হয়ে থাকবো। এতে করে একটু হলেও তোমাদের গর্ব হওয়ার কথা। তোমরা এবার চলে যাও বন্ধু। আমারও যাবার সময় হয়ে গিয়েছে। আর হয়তো তোমাদের সাথে মন খুলে কোনদিন কথাও বলতে পারবো না।
এই হয়তো আমাদের শেষ কথা বন্ধু। তোমরা চলে যাও। আর ভালো থেকো তোমরা। এরপর বাবুই দুটি বলে উঠলো... সত্যি বন্ধু আমাদের গর্ব হচ্ছে তোমাকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে। সত্যি তুমি অনেক মহান বন্ধু তাল গাছ। তোমার থেকে যদি মানব সমাজ কিছু অন্তত শিক্ষা নিতো তাহলে এই সমাজের চিন্তাধারা গুলো অনেক পাল্টে যেতো।

সহ-সভাপতি, এগারজন
মানিকগঞ্জ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper