ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যৌতুক

সিরাজুল মুস্তফা
🕐 ২:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯

-বাবা, বাবা তুমি খুব কষ্ট পেয়েছো তাই না?
-নারে মা। কি বলিস এসব। কষ্ট পেতে যাব কেন! তুই নিজের যত্ন নিস।
-হ্যাঁ জানি। সারাজীবন তাই বলো। আজ আর অমন কি বলবে আমি জানি। তাদের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তুমি মনে কষ্ট নিয়োনা বাবা।
-নারে মা, আমি কেন কষ্ট নিব! গরিবের কিরে মা কষ্ট পেতে আছে! গরিবের গায়ে সবই সয়রে মা। উল্টো আমার জন্য তোর অপমান সয়তে হলো।
কান্নায় মেয়েটির কণ্ঠ ধরে আসছিল। কান্না লুকাতে তাড়াহুড়ো করে আর কিছুই বলতে পারল না।
-আচ্ছা বাবা এখন রাখি, তোমার বিয়াইন ডাকছে।
-আচ্ছা মা। রাখো পরে কথা হবেনে।

নাদের আলি প্রান্তিক চাষী। লোকের খেত খামারে চাষাবাদ করে। দিন মজুরে হিসেবে। দিন এনে দিন খায়। সাদাসিধে লোক। এলাকায় কারুর সাথে কোনদিন মতবিরোধ হয়েছে এমন ঘটনা কেউ বলতে পারবেনা। সারাদিন কাজকাম করে এসে ঘোষের দোকানে বসে। চা-পানি গিলে। বিড়ি-সিগারেট, জদ্দা-চুরুট এসবের কিছুতেই তার মন নেই। ঘরটা কোনরকম চারটে খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে। টিনের চালে ইয়া বড় বড় ফুটো। তবুও কখনো কারো ঘরে হাত পাতেনি সে। লজ্জা লাগে। ছোটবেলা থেকেই এমন চরিত্রের অধিকারী। কিন্তু বুড়ো বয়সে তার সে লজ্জা আর ধরে রাখা গেল না। একমাত্র মেয়ে চম্পার জন্য ভাঙতেই হলো। গোসাল ডাঙায় মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছে । মাস ছয়েক হলো। কিছুদিন পর খোদা চাইলে একটা নাতি-নাতনিরও মুখ দেখতে পাবে সে। মনেমনে তার কি খুশি! মেয়েটির বিয়েতে হাতে যা টাকাকড়ি ছিল সবই সে উজাড় করে দিয়েছে। হাত পুরোটাই শূন্য। বিয়ে নিয়ে ক’দিন কাজকামও করতে পারেনি। যদি হাতে ধরার মতন একটা ছেলেপেলে থাকতো, তার সাহায্য হতো। না বিধাতার ইচ্ছেয় এই এক মেয়ের পর কোন সন্তান জন্ম নেয়নি তার বিবির ঘরে। মেয়েটির বাড়ি সব পাঠিয়েছে। কুরবানির পশু পাঠাতে পারেনি। গরীব মানুষ, মেয়ের জামাইকে অনেক করে বুঝিয়ে বলেছে,

-দেহ বাপ, আমি কথা দিতাছি আগামী বছর আমি তোমাগো হাউস ফুরামু। এই বছর পারতাছি না বইলা খারাপ লাগতাছে নিজেরি। কি করমু কও! একজন মানুষ।
-আচ্ছা আব্বা ঠিক আছে। আমগো এসবের দরকার নাই।
পশু না দিলেও কুরবানির দিন অন্তত পিঠা-পরটার সাতে মাংস তরকারিতো পাঠাতেই হয়। তাই বাধ্য হয়ে বুড়ো সোলামানের কাছে আরজি দেয়,
-বাবা তোমার বইনের বাড়িত পিঠা পাঠানো লাগে, যদি আমারে কিছু মাংস দিতে পারো।
এটা বলতে বেচারার গলা ধরে আসে। সোলেমান বলে,
-আর কি কন চাচা! এত বড় গরু জবাই করছি দিমু না ক্যান। নিয়ে যাইয়েন। গরু কাটনের পরই।
বুড়ো সে মাংস নিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যায়। মন ভর্তি খুশি বোঝায় করে। এক টুকরো মাংসও ঘরে রাখেনি নিজেদের জন্য।
আরে আমাদের আর কে আছে! মেয়েটা সুখে থাকলে আমরা সুখি। ঘরে ঢুকতেই মেজো বৌ তাকে বসতে দিয়ে খাবারের বাটিগুলো নিয়ে ভিতরে যায়। শুরু করে,
-আম্মা দেহেন- ভাবির বাপে আমগোর লাইগা কি আনছে! আমরা ফকির নাকি? এক টুকরাও মাংস নাই সব চর্বি আর হাড্ডি।
মেয়ের শ্বাশুড়ি তেড়েপুড়ে এসে মুখের উপর বাটিটা ফেরৎ দিয়ে দিল।
-কে বলছে এসব এহানে আনতে। ধরেন মিয়া। এসব নিয়া ঘরে যান। বৌরে নিয়া খান গিয়া।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper