ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আনারস পাতা দিয়ে হস্তশিল্প

মহব্বত হোসেন, টাঙ্গাইল
🕐 ১১:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৯

টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফেলে দেওয়া কলাগাছ আর আনারসের পাতা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের এক সম্ভাবনাময় কারখানা। সেখানে তৈরি হচ্ছে নিত্য ব্যবহৃত শৌখিন নানা ধরনের পণ্য; যা দেশের সীমানা পেরিয়ে বিক্রি হচ্ছে উন্নত দেশগুলোতেও।

টাঙ্গাইলের মধুপুরের বনাঞ্চল জাঙ্গালিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এ হস্তশিল্পের কারখানায় কাজ করে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে পেয়েছেন স্থানীয় অর্ধশতাধিক দরিদ্র নারী। আনারসের রাজধানীখ্যাত মধুপুরে ২০১৭ সালে ভিন্ন ধরনের এই হস্তশিল্পের কারখানার পথচলা শুরু হয়। মধুপুর বনাঞ্চলের পরিত্যক্ত কলাগাছের বাকল আর আনারসের ফেলে দেওয়া পাতা দিয়ে গ্রামের দরিদ্র নারীরা তৈরি করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় শৌখিন পণ্যসামগ্রী। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করা আকর্ষণীয় এসব পণ্য যাচ্ছে চীনসহ উন্নত দেশগুলোতে। সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখানে দরিদ্র নারীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।

সম্প্রতি মধুপুর উপজেলার জলছত্র ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই গ্রামীণ নারীরা সারিবদ্ধভাবে হস্তশিল্পের কারখানায় গিয়ে আপন মনে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন দৃষ্টিনন্দন বাহারি নকশার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই গ্রামের নারীরা ছাড়াও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে অনেকে আসেন কাজ করার জন্য। এক সময় যারা শুধু বাড়ির কাজ করে দিন পার করতেন, তারা এখন মর্যাদার সঙ্গে কাজ করে আর্থিকভাবে অনেকটাই স্বাবলম্বি হচ্ছেন। সন্তানদের পড়ালেখার খরচসহ সংসারে তারা আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছেন।

শুরুতে তাদের কাছে কাজটি কঠিন মনে হলেও এখন অনেকটাই সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে স্থানীয় অন্য নারীরাও কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মধুপুরে আনারসের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ কলার আবাদ হয়ে থাকে। প্রথমে ফেলে দেওয়া কলাগাছ আর আনারসের পাতা সংগ্রহ করা হয়। এরপর তা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হচ্ছে আকর্ষণীয় সব পণ্য। এটিকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। কলাগাছ আর আনারসের পাতার আঁশ বা ফাইবার থেকে ফেব্রিক্স তৈরি করাও সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নারী উদ্যোক্তা ও বুরো ক্র্যাফটের মুখ্য সমন্বয়ক রাহেলা জাকির জানান, আমরা গ্রামীণ নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দুই বছর আগে প্রকল্পটি চালু করেছি। প্রাকৃতিক কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্যগুলো পচনশীল হওয়ায় বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে চীনে একটি প্রদর্শনী মেলায় এসব পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। ব্যাপক সাড়া মিলেছে সেখানে। এ ছাড়া ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অর্ডার পাওয়া গেছে।

শুধুমাত্র মধুপুরেই যে পরিমাণ কাঁচামালের জোগান আছে তাতে ভবিষ্যতে ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য থেকে ফেব্রিক্স ইন্ডাস্ট্রি চালানো সম্ভব। ইতোমধ্যে এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে আনারসের পাতা আর কলাগাছের বাকল থেকে ফেব্রিক্স ইন্ডাস্ট্রি করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান রাহেলা জাকির। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সম্ভাবনার এই প্রকল্পকে অনেক দূর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।

 
Electronic Paper