আজব শহর
গোলাম মোর্তুজা
🕐 ১০:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৯
এদেশে সবাই সামাজিক, নয় শুধু মানবিক। তালে তালে তালি দিয়ে অনেকেই চলে বলে। আবার কেউ কেউ চলে ছলে-কৌশলে। তবে চলছে সবাই ভবে আর আবভাবে। সরেন ‘হাঁটুভাঙা দ’ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। স্ত্রী ছন্দা। একদিন বলল, আল্লাহর বান্দা! কিছু-মিছু কর কামের ধান্দা।’ ধরেন আপন বউয়ের কথায়, রওনা দিল ঢাকায়।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার, গাড়ি ছাড়ল রাত বারোটায়। রজনীগন্ধ্যা গাড়ি সারারাত গন্ধ করল ছাড়াছাড়ি। সরেনের ঘুম নাই। মাঝরাতে বসার জায়গাও ছাড়তে হলো তাই। নিম্নচাপের চাপে ধরেন বেসামাল-নিশ্চুপে। গাড়ি থামবে না এত রাতে। সরেন তাই জানালা দিয়ে কাজ সারলেন দ্রুতে। সকালে গাড়ি পৌঁছাল গাবতলী। ঢাকায় সরেনের আছে এক আত্মীয়। বংশে ওরা ক্ষত্রিয়। আবার গাড়িতে চড়ল সরেন- চাপা আর চাপিতে পড়েন কী মরেন। একজন প্যাসেঞ্জারে কথা বলেন ম্যাসেঞ্জারে। একটু পরপর শব্দ হয় টুংটাং। সরেন সেখানে দাঁড়িয়ে। মেজাজ সঙ্করজাত গেল বিগড়ে। বলল, ‘ভাইজান, একটুখানি আস্তে দ্যান দেখি। কান হলো ঝালাপালা বিশ্রি ডালপালা।’ সরেনের ছন্দময় কথা শুনে ব্যক্তি রেগে-মেগে বলেন, ‘কিয়া হুয়া, কানে দিন তালা। যত্তসব ফালতু মিয়া।’ সরেন বুঝল ছেলেটি বেত্তমিজ। আলাদা জাতের, নেই তমিজ। দরজার সামনে তাই আগা। হেলপার পাশে লাগা। গাড়ি দাঁড়াল এক রাস্তায়। হেলপার শুধু হাঁকায়।
দ্রুত বেগে উঠল ক’জনে, গায়ের গন্ধে সরেন শরমে। হঠাৎ এলো এক কঠিন চাপ। পকেটমারের প্রথম ধাপ। সরেনের সাইড পকেট হয়েছে কাটা। সাবাড় হলো টাকা। মোবাইলটাও হারাল, পকেটমার ওটাও নিল। নামল সরেন গন্তব্যে বুঝে-সুঝে। পকেটমাররাও নেমে গেছে আগের স্টপেজে। আত্মীয়ের বাড়ি, যেতে হবে তাড়াতাড়ি। পেট খিদেয় চুঁইচুঁই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ছুঁইছুঁই। সময় দেখবে বলে, হাত চালায় পকেটের তলে। পকেটের নেই তলা, মোবাইলটা অপয়া। অন্য পকেটে ছিল টাকা, সে পকেটও কাটা-ছাঁটা। সরেন চিৎকার দিল, আমার সামনে পেছনে সব হারাল সব।
এহন যামু কই? কাজও পাইনিকো জুতসই। রাস্তায় চলছে গাড়ি, চলছে সরেনের আহাজারি। আত্মীয়ের নম্বরদ্বয়, মোবাইলে ছিল সঞ্চয়। এক্ষণে শহরের ক’জনা এলো। বলল, ‘কী হয়েছে তোমার? খোয়া যায় এখানে সবার। যে যার মতো করে খায়। এখানে কেউ কারো নয়।’ সরেন ব্যক্তিগুলোকে চিনেছে, এরাই ওর মোবাইল ও টাকা মেরেছে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228