ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোহিঙ্গা সংকট ও পরিবেশ বিপর্যয়

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
🕐 ১০:০৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে একটি উদার ও মানবিক রাষ্ট্রের পরিচয় দিয়েছে। মানুষের পাশে অবশ্যই মানুষের দাঁড়ানো উচিত। সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।

বাংলাদেশে ২০১৭ সালের আগস্টের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। বর্তমানে এর সংখ্যা আনুমানিক ১১ লাখ। সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য ৬ হাজার একর বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশের বনভূমি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর বিরাট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশগত বিপর্যয় নিয়ে ২০১৮ সালে একটি কাজ করেছিল। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী কক্সবাজার এলাকায় তখন প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল। এ সময় প্রায় ৪৩০০ একর পাহাড় ও বনাঞ্চল কেটে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। প্রতিবেদন মতে, এখানকার ১৫০২ হেক্টর বন এখন সংকুচিত হয়ে ৭৯৩ হেক্টরে নেমেছে। টেকনাফ-উখিয়া-হিমছড়ির প্রায় ৩০০০ থেকে ৪০০০ একর পাহাড়ি এলাকা বাগানের জন্য পরিষ্কার করা হয়েছে। যে হারে জ্বালানি কাঠ কাটা হচ্ছে তাতে ২৫ হাজার একর বনভূমি বছরে উজাড় হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ মাসে ৬৮০০ টন জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিদিন প্রতিটা রোহিঙ্গা পরিবার ৬০টি বাঁশ ব্যবহার করে। কয়েক হাজার টিউবওয়েল সেখানে স্থাপন করা হয়েছে, যা জলের স্তরের ওপর প্রভাব ফেলছে। জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বায়ুদূষণ বেড়েছে। বনের ক্ষয়ের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়া অন্যান্য জায়গার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে বন ও বনের জীবজন্তুর ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে। অনুমান করা হচ্ছে দিনে সেখানে ৩ থেকে ৫টি ফুটবল খেলার মাঠের সমান বন ধ্বংস হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে টেকনাফ ওয়াইল্ডলাইফ সেঙ্কচুয়ারি, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান ও ইনানি সংরক্ষিত বনও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এখানে প্রতিদিন কাঠ কাটা থেকে শুরু করে বনের নানা সম্পদ তারা ধ্বংস করছে। টেকনাফ ওয়াইল্ডলাইফ সেঙ্কচুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে হাতির সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে। এ অবস্থায় হাতি ছাড়াও এখানকার অন্য প্রাণীরা বিপদসংকুল হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া কুতুপালং ক্যাম্পে বন্য হাতির তা-বে ১১ জনের মৃত্যু ও অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কুতুপালং ক্যাম্পটি প্রাচীনকাল থেকেই পরিব্রাজক পথ হিসেবে হাতি ব্যবহার করে আসছে। সেই পথে এখন হাতির যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে ক্যাম্পে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের সরবরাহ করা হলে জ্বালানি হিসেবে গাছ কাটার প্রবণতা কমবে। রোহিঙ্গা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্যের বিষয়টিও সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র : গবেষক ও কলাম লেখক
[email protected]

 
Electronic Paper