ছাত্রদলের কাউন্সিলে চোখ সাবেকদের
নেতা বানাতে দৌড়ঝাঁপ
হাসান ওয়ালী
🕐 ১০:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হতে যাচ্ছে ছাত্রদলে। ১৯৯২ সালের পর চলতি মাসের ১৪ তরিখে ভোটারদের সরাসরি রায়ে নির্বাচিত হবেন শীর্ষ দুই নেতা। ভোটে নেতা নির্বাচিত হলেও কাউন্সিলকে ঘিরে দৌড়ঝাঁপ থেমে নেই সাবেক নেতাদের। ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পছন্দের প্রার্থী দিয়ে ‘অদৃশ্য’ প্যানেল তৈরি করেছেন তারা। পছন্দের প্রার্থীকে নেতা বানাতে অন্য গ্রুপের সঙ্গে ঐক্যপ্রক্রিয়াও চলছে অন্দরমহলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর ভোট হলেও সাবেক নেতাদের আধিপত্য কমছে না। তাদের আশীর্বাদপুষ্টরাই আসছেন নেতৃত্বে।
ছাত্রদলের সিন্ডিকেটের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর গ্রুপ। এর বাইরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান গ্রুপ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির গ্রুপ, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর গ্রুপ, নির্বাহী সদস্য হাসান মামুন গ্রুপ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এবং ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রাজীব গ্রুপ সক্রিয়। ছাত্রদলের কাউন্সিলে কয়েক গ্রুপ একত্রে প্যানেল দেওয়ায় শেষ অবধি লড়াইয়ে সবার দেখা নাও মিলতে পারে।
বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ২৭ জনের প্রার্থিতা বৈধতা পেয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় সভাপতি পদে ৮ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদের মধ্যে সভাপতি পদে বৈধ প্রার্থীরা হলেন- কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, হাফিজুর রহমান, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো. এরশাদ খান, মো. ফজলুর রহমান খোকন, এসএম সাজিদ হাসান বাবু ও এবিএম মাহমুদ আলম সরদার।
সাধারণ সম্পাদক পদে বৈধতা পেয়েছেন- মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, মো. আমিনুর রহমান আমিন, শেখ আবু তাহের, শাহ নাওয়াজ, সাদিকুর রহমান, কে এম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল, মো. জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল) মো. হাসান (তানজিল হাসান), মুন্সি আনিসুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা ও কাজী মাজহারুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে সভাপতি পদে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর গ্রুপের মনোনীত প্রার্থী। তবে শ্রাবণের বিরুদ্ধে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ার অভিযোগ থাকায় এ গ্রুপের প্রার্থী বদল হতে পারে। সেক্ষেত্রে আশরাফুল আলম ফকির, মো. ফজলুর রহমান খোকন বা মো. আব্দুল মাজেদ এ গ্রুপের প্রার্থী হতে পারেন।
এছাড়া মাহমুদুল হাসান বাপ্পি বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান গ্রুপের প্রার্থী, হাফিজুর রহমান স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের গ্রুপের প্রার্থী, তানভীর রেজা রুবেল ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান গ্রুপের প্রার্থী, এরশাদ খান ব্যারিস্টার কায়সার কামালের প্রার্থী।
সাধারণ সম্পাদক পদে তানজিল হাসান সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রাজীব আহসানের প্রার্থী, শাহ নেওয়াজ সদ্য বিদায়ী সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনের প্রার্থী, মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরাম হাসানের প্রার্থী, মিজানুর রহমান শরিফ সেলিমুজ্জামান গ্রুপের প্রার্থী। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরা সাবেক নেতাদের আশীর্বাদ নিয়ে এগোচ্ছেন।
বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিনিয়ত চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নিজেদের মধ্যে চলছে বোঝাপড়া। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ঐক্য করে বৃহত্তর প্যানেল করেছে কয়েকটি গ্রুপ। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কোনো প্যানেলই স্থায়ী নয়। শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশে যে কারও কপাল খুলতে পারে।
ভোটের বাজারে সাবেক নেতাদের আধিপত্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ছাত্রদলের ১১৭ ইউনিটের ৫৮৫ জন প্রতিনিধি কোনো না কোনো গ্রুপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এলাকাভিত্তিক আধিপত্যেও অনেকে ভোট নিজের দিকে নিয়ে আসছেন। এ ভোট বাগে আনতেই ছাত্রদলের নেতারা সাবেকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
ছাত্রদলের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলছেন, নেতৃত্ব নির্বাচনে সাবেক নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ নেই। তার ভাষ্য, ‘আগের কমিটিগুলোতে কিছুটা এ ব্যাপারটা ছিল। কিন্তু এবার প্রত্যক্ষ ভোটে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।’ তার প্রশ্ন, যারা গ্রুপিং বা আধিপত্য বিস্তারের কথা বলছেন, কিসের ভিত্তিতে বলছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।
নতুন কমিটিতে নেতা নির্বাচনে ‘২০০০ সালের পরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে’ মর্মে শর্তারোপ করায় অপেক্ষাকৃত তরুণরা চলে এসেছেন লাইমলাইটে। এ শর্তে বাদ পড়েছেন সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ সদস্য।