কক্সবাজারের অপূরণীয় ক্ষতি
সতর্কতা প্রয়োজন এখনই
সম্পাদকীয়
🕐 ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
প্রাকৃতিক সম্পদের লীলাভূমি কক্সবাজার আমাদের গর্ব। বিশ্ব মানচিত্রে আপন পরিচয় তুলে ধরতে এ জেলাটি আমাদের উপস্থিতি জানান দিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। সময়ের প্রবহমানতায় কক্সবাজারকেন্দ্রিক আমাদের যত উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল, তা ধীরে ধীরে ডানাও মেলছিল। কিন্তু দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হওয়ার পর পাল্টে যায় এ এলাকার দৃশ্যপট। চেনা কক্সবাজার এখন অনেকটাই অচেনা হতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে সম্ভাবনাময় এ জেলাটি।
খোলা কাগজে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা এখন দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। দুই উপজেলার স্থানীয় অধিবাসী যেখানে সাড়ে পাঁচ লাখ সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। স্থানীয় অধিবাসী ও উন্নয়নকর্মীরা জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্রোতের মতো আসা রোহিঙ্গাদের চাপে কৃষি জমি, শ্রমবাজার, মাছ ধরার মতো জীবিকা সংকুচিত হয়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, কমেছে শিক্ষার সুযোগ। বিপুল মানুষের চাপে বিশুদ্ধ পানীয়জলের সংকট বেড়েছে। রাস্তাঘাট, অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে অপরাধপ্রবণতা। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা আন্তর্জাতিক ও দেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পেলেও স্থানীয়রা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এসব কারণে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে যে কক্সবাজারের জনগণ বিশ্বে মানবিকতার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়েছিল, দুই বছর পরে এসে তাদের মাঝেই তীব্র রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিত উদ্যোগে এটার যদি সমাধান করা না যায় তবে ভবিষ্যতে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বড় ধরনের সংঘাত বেধে যেতে পারে।
এছাড়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বসতির কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৬ হাজার ১৬৩ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। আর্থিক বিচারে এ ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যগত ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়।
রোহিঙ্গাদের অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় এখন কক্সবাজারের বাসিন্দারা মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারবাসীর জন্য অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সরকারের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার। কারণ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের থেকে যাওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228