নারী নয় মানুষ ভাবুন
নীলাদ্রি রোকসানা
🕐 ১:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
নর ও নারী এ দুয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় মানব সমাজ। মূলত মানব সমাজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সব চেয়ে বড় ভূমিকা রাখে নর ও নারী উভয়েই। তাই মানব জীবনে উভয়ের গুরুত্ব অনেক ব্যাপক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সমাজ জীবনে একজন নর/পুরুষ যেভাবে মূল্যায়িত হয় তেমনি একজন নারী নানাভাবে নানা কারণে হয় বড় অবহেলিত ও নির্যাতনের শিকার অর্থাৎ অবমূল্যায়ন করা হয় নারীকে। নারীর অবমূল্যায়নটা শুরু কিন্তু পরিবার থেকেই। আর সেটা শৈশব থেকে হয়। যেমনটা আমি নিজেও ফেইস করেছি।
মেয়ে শিশু হলে নানা রং বেরংয়ের পুতুল আর হাঁড়ি পাতিল দেওয়া হয় আর ছেলের বেলায় বন্দুক, পিস্তল, গাড়ি ইত্যাদি দেওয়া হয় খেলার জন্য। বর্তমানে আমেরিকার একটা খেলনা কোম্পানি খেলনা বিক্রয়ের সুবিধার জন্য বাজারকে ২টা ভাগে ভাগ করেছে। যথা বয়েজ ওয়ার্ল্ড ও গার্লস ওয়ার্ল্ড। বয়েজ ওয়ার্ল্ডে ছেলেদের খেলনা ও গার্লস ওয়ার্ল্ডে মেয়েদের খেলনা বিক্রি করেন।
এরপর বিবাহিত মেয়েদের কথায় আসি, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কিছু পুরুষ ব্যতীত সব পুরুষ চায় না তাদের স্ত্রীরা পড়াশোনা করুক/চাকরি করুক, তাছাড়াও হিজাব/বোরকা পরতে বাধ্য করে, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করতে বাধ্য করে, কারণে অকারণে তালাক প্রদানে/পুনঃবিবাহে বাধ্য করে, স্ত্রীর অমতে/ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে চায় ইত্যাদি ইত্যাদি কাহিনী দেখা যায়।
এবার দেখা যাক গণমাধ্যমে নারীদের কি অবস্থা। গণমাধ্যম সারাবিশ্বের সংস্কৃতিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। এখানেও সূক্ষ্মভাবে অবমূল্যায়ন করা হয় নারীকে।
পণ্যের বিজ্ঞাপনে পণ্যের মতই ব্যবহার করা হয় নারীকে।বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী যেমন-সাবান, ক্রিম, খাবার, মোবাইল নেটওয়ার্ক, নিত্যব্যবহার্য জিনিস এমনি গাড়ির ক্ষেত্রে নারীকে তুলে ধরা হয় পণ্যের চেয়েও আর্কষণীয় পণ্য সামগ্রী হিসেবে। এবার ভাবুন একটা বিষয় ছোটবেলায় যে মেয়েদের খেলার জন্য খেলনা হিসেবে গাড়ি দেওয়া হয় না, সেই মেয়েদের ব্যবহার করা হচ্ছে গাড়ির বিজ্ঞাপনের কাজে।
যাতায়াতের কথা একটু না বলে পারছি না। একটা কমন কথা প্রায় শুনি আমরা। সমান অধিকার দাবি করেন, তাহলে যানবাহনের ক্ষেত্রে অসমান কেন? আমরা বলছি না আমাদের জন্য আলাদা কিছু করতে। শুধু গাড়িতে আমাদের কোনো হয়রানি করবেন না। দেখবেন আমরাও আপনাদের মত করে পথ পাড়ি দিতে পারবো।
আপনারা জানেন সবাই নারী নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্তান গর্ভে ধারণ করে ও জন্ম দেয়। তার ক্ষেত্রে বাসে দাঁড়িয়ে যাওয়া তেমন কষ্টের কিছু না। যদি কিনা আপনার কোনো রকমের হয়রানি না করেন তাহলে।
এবার আসি একটু সাইবার নিপীড়ন। আমার টপিকটা যেহেতু নারীকেন্দ্রিক, তাই নারীর সাইবার নিপীড়নের কথা বলা যাক। এই আধুনিক প্রযুক্তির একটা নেতিবাচক দিক হলো সাইবার নিপীড়ন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নারীরা হয়রানি হচ্ছে যেমন প্রেমের সম্পর্কের ছবি, ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে মেয়েটাকে ব্লাকমেইলের চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও যৌতুক, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ তো আছেই। পৃথিবীতে এক মাত্র প্রাণী মনে হয় নারী, যাদের সাথে এত রকমের অন্যায় করা হয়। সামাজিক সমস্যাগুলোর প্রায় বেশির ভাগই নারীদের। সর্বোপরি পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই। আমাকে নারীবাদী ভেবে গালাগাল দিবেন না। আমি/আমরা বেশি কিছু চাইছি না। শুধু আমাদের পাওনাটুকু চাই, সম্মানের সাথে বাঁচতে চাই, মানুষের মতো করে বাঁচতে চাই। আপনাদের (পুরুষ) সাথে তাল মিলিয়ে দেশ ও জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চাই।
সদস্য, এগারজন, রাজশাহী।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228