ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফরম ফিলাপ

দীপঙ্কর সরকার
🕐 ১:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯

অভি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ও এবারের ভর্তি পরীক্ষায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। ক্লাস শুরু হতে আরো মাস দেড়েক বাকি। এই প্রথম ছেলে হোস্টেলে যাবে বলে বাবা মায়ের ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

কিন্তু অভি সবকিছু সামলে নিয়েছে। বাবার একমাত্র ভাঙাচোরা ফোনটি বদলে একরকম জোর করেই একটি স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে। তারপর দিনভর চলে বাবা ছেলের- ফোনের ক্লাস। ছেলে বাবাকে শেখাচ্ছেন কীভাবে ফোন ব্যবহার করতে হয়। বাবাও অনুগত ছাত্রের মতো শিখে নিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে বাবার নামে একাউন্ট খোলা হয়েছে। কি করে ম্যাসেজ পাঠাতে হয়, ফটো আপলোড দিতে হয়, ভিডিও কল করতে হয় সবটাই আত্মস্থ করছেন ওর বাবা।

পরশু অভির ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। আগামীকাল ওকে হোস্টেলে ফিরতেই হবে। অভি চলে যাওয়ার পর বাড়িটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অভির বাবা ততদিনে স্মার্টফোন সম্পর্কে মোটামুটি বুঝে গেছেন। ফেসবুকে নিত্যনতুন বন্ধু বানাচ্ছেন। নতুন করে কৌতূহল জাগছে।

মাঝে মাঝে অভিকে নক করে আপডেট জানতে চাইছেন। অভিও ছোট্ট ম্যাসেজ বা সেলফি তুলে বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অভির ক্লাস শুরু হয়েছে। ব্যস্ততা বেড়েছে। সকাল থেকে ক্লাস মাঝখানে দুপুরের খাবারের বিরতির পর আবার ল্যাব শুরু। শত ক্লান্তির মধ্যেও বাড়িতে রোজ একবার করে ভিডিও কলে বাবা মার সাথে কথা হয় ওর। মায়ের ভীষণ মন খারাপ তবুও ভিডিও কলে ওর ছবি দেখলে মন খারাপ অনেকটাই কেটে যায়। অভিও ক্যাম্পাসের ছবি, হোস্টেলের ছবি, কখন কি করছে সব ছবি তুলে বাবার ইনবক্সে পাঠায়। এভাবে সময় বেশ ভালোই চলছিলো।

বছর প্রায় শেষের দিকে। আর কিছুদিন পরেই অভির ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। ফরম ফিলাপ শুরু হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলাপ করতে সব মিলিয়ে ১৮৬০ টাকা লাগবে।ওর বেশির ভাগ বন্ধু বাড়ি থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা নিয়েছে। একেকজন পাঁচ হাজার, সাত হাজার টাকা নিয়েছে। অভিও বাবাকে ফোন করে জানালো
-বাবা, ফরম ফিলাপ শুরু হয়েছে। টাকা লাগবে
-কত টাকা?
-৪৮৭০ টাকা লাগবে (রাউন্ড ফিগার না বলে ৪৮৭০ বেশি বিশ্বাসযোগ্য)। তুমি পাঁচ হাজার পাঠিয়ে দিও।
-আচ্ছা পাঠাচ্ছি।
পরেরদিন ওর বাবা পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলেন। অভি ফরম ফিলাপ শেষ করলো। বাকী টাকাটা নিজের কাছে রেখে দিল। অভির চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। বেশ গদগদ হয়ে বাবাকে ফোন করলো
-বাবা, ফরম ফিলাপ করেছি।
-ফরম ফিলাপ যে করলি তার রসিদ ছবি তুলে ইনবক্সে পাঠিয়ে দে তো।
-আ............চ্ছা।
মুহূর্তেই অভির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। মনের আনন্দ পাখি ডানা ভেঙে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে নিজে একশ একবার গালি দিল। কেন যে বাবাকে স্মার্টফোন চালানো শেখাতে গেল সে জন্য নিজের গালে নিজেকেই থাপড়াইতে ইচ্ছে করছে। মানুষ খাল কেটে কুমির আনে আর অভি স্মার্ট বাবা এনেছে।

প্রচার সম্পাদক, এগারোজন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper