সাদা চিনিতে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৯
ঝরঝরে সাদা চিনি। খুব একটা স্বাস্থ্যকর যে না, তা হয়তো অনেকেই জানেন। এর চাহিদা কিন্তু কম না। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে যা পাওয়া যায়, তার ৯০ শতাংশই সাদা চিনি। কিন্তু সিঙ্গাপুরের প্যাসিফিক ল্যাব থেকে পরীক্ষা করিয়ে এনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) বলছে, তারা এই সাদা চিনিতে অস্তিত্ব পেয়েছেন- সোডিয়াম সাইক্লামেটের, যেটি পরিচিত ঘন চিনি নামে। বাংলাদেশে একটি নিষিদ্ধ উপাদান এটি।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে পরীক্ষা করা বাজার থেকে সংগৃহীত প্যাকেটজাত ১২ ও খোলা চারটি সাদা চিনির নমুনার সবকটিতেই ছিল সোডিয়াম সাইক্লামেটের উপাদান।
এটি কেন ব্যবহার করা হয়- জানতে চাওয়া হয় বিএআরসির পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলামের কাছে। যিনি এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, জাপান ও আমেরিকাসহ বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে এই উপাদান নিষিদ্ধ। আমরা যখন ভাত খাই, তখন একটা পাথর পেলে ফেলে দিই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কিন্তু সেটা চিন্তা করেন না। ব্যবসায়ী মনে করেন, ১০০ টনের মধ্যে মাত্র এক টন পাথর মিশিয়েছি। এই অতিরিক্ত এক টন পাথর দিয়েই কিন্তু মুনাফাটা আদায় করে নিচ্ছেন।
সাদা পাউডারের মতো পদার্থ সোডিয়াম সাইক্লামেট বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৬ সালে। চিনির চাইতে ৩০-৫০ গুণ বেশি মিষ্টি, দামে কম এ পদার্থটি স্বাদে চিনির সঙ্গে তফাৎ কম। এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ক্যান্সারও। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমীর রুমি আলীম বলেন, শরীরে রক্তে ক্যান্সার হতে পারে সোডিয়াম সাইক্লামেটে। একইসঙ্গে পুরুষদের বন্ধ্যত্বের জন্যও এই পদার্থ দায়ী। কারণ হলো- আমরা যখন সাইক্লেমেট খাই তখন আমাদের অন্ত্রের মধ্যে যে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু আছে সেগুলো রক্তের মধ্যে কারসিনোজেন, যেটা ক্যান্সার তৈরি করতে পারে এই রকম একটা উপাদানে রূপান্তরিত করে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যদি এই সোডিয়াম সাইক্লামেট গ্রহণ করা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রবলভাবে থেকে যাচ্ছে।
পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে সচেতন হলেও সাধারণ ভোক্তারা কতটা সচেতন তা জানতে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। পঞ্চাশোর্ধ এক গৃহিণী বলেন, প্যাকেটের সাদা চিনি দেখতে ভালো। মিহি থাকে। তাই এটা কিনে খাই। কিন্তু এতে যে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান থাকে তা জানা নেই।
এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহানের কাছে।
তিনি বলেন, চিনিতে ক্ষতিকর উপাদান আছে এটা জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। আমাদের আইনের বিধান অনুযায়ী, এগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করিয়েছি, পুনরায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য। বিএআরসি যেটা পরীক্ষা করেছে, সেটা সঠিক আছে, তাদের তথ্য সঠিক। এখন আমরা এসব বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করব। একইসঙ্গে বাজারে এমন যত সব পণ্য আছে সব প্রত্যাহারের জন্য বলব। যাতে করে গণস্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২.১১ লাখ মেট্রিক টন ঘন চিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট আমদানি করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আনা হয় ১৮.৩৩ লাখ মে. টন ঘন চিনি। আমদানি করা এসব ঘন চিনি প্রক্রিয়াজাত করার মধ্য দিয়ে পরিণত হয় সাদা চিনিতে।