ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফটোশপে অশালীন ছবি তৈরি ও প্রচার

অপমানে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

ছগির হোসেন, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর)
🕐 ১০:০৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৯

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেওয়ায় রুকাইয়া আক্তার রূপা (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটি ক্ষোভে এবং লজ্জায় ঘরে থাকা ঘুমের ওষুধসহ একত্রে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করে গত শুক্রবার গভীর রাতে আত্মহত্যা করে। নিহত রূপা স্থানীয় বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং ব্যবসায়ী রুহুল আমিন মুন্সীর মেয়ে।

নিহতের বাবা রুহুল আমিন মুন্সী জানান, বিগত কয়েক মাস ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিত নিজ ভা-ারিয়া গ্রামের মঞ্জু খানের ছেলে তামিম খান (১৯)। এতে রাজি না হওয়ায় রূপার একটি ছবি এডিট করে তা বিভিন্নজনের মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয় তামিম। গত শুক্রবার বিকালে এক সহপাঠীর সঙ্গে প্রাইভেট পড়া শেষে বাসায় ফিরছিল রূপা।

এ সময় পথ আটকে তাকে বিরক্ত করতে থাকে তামিম এবং তার সঙ্গে প্রেম না করলে ফটোশপে এডিট করা অশালীন ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। বাড়িতে ফিরে রূপা বিষয়টি তার মাকে জানায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে রূপার বাবাকে জানান তার মা। রাতে বাড়ি ফিরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

ওই দিন রাত ১০টায় বাড়ি ফিরে রূপাকে তার ঘরে ডাকতে পাঠালে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পাওয়া। অনেক ডাকাডাকির পরও তার কোনো সাড়া না পাওয়ায় ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেন। এ সময় তাকে ঘরের মধ্যে অচেতন অবস্থায় পান। রূপা ঘরে থাকা ঘুমের ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে অচেতন হয়ে যায়। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কোনো চিকিৎসা না করে ডাক্তাররা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে রাতেই বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও তারা অভিযুক্ত তামিমকে আটক করতে পারেনি। তবে রূপাকে উত্ত্যক্তকারী তামিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে রূপার স্বজন ও স্থানীয়রা।

শনিবার সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহরের শের-ই-বাংলা সড়ক অবরোধ করে রূপাকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিদ্যালয়ের সম্মুখে মানববন্ধন করে। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেয় নিহত রূপার সহপাঠী রূপকথা রানী, মেঘা আক্তার, তাহিয়া তাইফুন রিমি, ঐশী আক্তার, আমিনা আফরোজ প্রমুখ।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার হাওলাদার বলেন, রূপা স্কুলের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। বখাটের অশ্লীল উৎপাতে তার এমন মৃত্যু আমরা মেনে নেওয়া যায় না। বিদ্যালয়ের ভালো ছাত্রী সে কেবিনেট নির্বাচনে প্রথম হয়েছেল। আমি অপরাধীর বিচার চাই এবং সব শিক্ষার্থীর নিরাপদে বিদ্যালয়ে আসার ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

ভাণ্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার থানায় লাশ নিয়ে এসে অভিযোগ জানায়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত বখাটে ঘটনার পর পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।

 
Electronic Paper