ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বন্ধু নামের শত্রু!

শফিক হাসান
🕐 ৪:২১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৯

নীরবে-সরবে কম যুদ্ধ করেনি সাজ্জাদ, ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে মনে হলো অতীতে কিছুই করেনি! জীবন সংগ্রামকেই যুদ্ধ জেনেছিল এদ্দিন। বাবা অকালে মারা গিয়েছেন বোধহয় ঘাড়ের জোয়ালটা চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করে!

বিধবা মা কষ্টে-সৃষ্টে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়ার রসদ জুগিয়েছেন। তার স্বপ্ন ছেলেকে ‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার’ বানাবেন। গাঁয়ের মানুষ ‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের মা’ ডাকবে এমন স্বপ্নে বুঁদ রিজিয়া খাতুন। সাজ্জাদ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে একত্রে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া অসম্ভব। মা মানতে নারাজ। তার দূর সম্পর্কের এক খালাতো ভাই প্রফেসর, সেই ‘প্রফেসরের বোন’ হয়ে কেন বুঝবেন না এসব! সাফকথা তার- ‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার না হয়া সামনে আইবি না!’
‘চাইলেই কি ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যায়?’

‘ক্যান যাইব না! তোরে ট্যাকা কম দিছিলাম কোনো দিন?’
ভর্তিযুদ্ধ যে বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে ছোট নয়, মাকে বোঝাতে পারেনি সে। দ্বাদশ শ্রেণি পাস করে একদিনও বসে থাকার সুযোগ নেই। নিতে হবে দুর্গম গিরি পারের প্রস্তুতি। ভর্তিযুদ্ধের গল্পে নানারকম প্রযুক্তি ও বগিজগি থাকলেও একদমই নেই রূপকথার আঁচড়। চারদিকে অসংখ্য কোচিং ‘কোম্পানি’, কত প্রলোভন তাদের! একেকটা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বানিয়ে দেবে এমন কিছু- পাস করলে চাকরিই উল্টো খুঁজবে! চাকরির হাত-পাগুলো কোথায় থাকে দেখেনি সাজ্জাদ। এটা জেনেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য কোচিংয়ের বিকল্প নেই। ধার করা পাঁচ হাজার টাকা রিজিয়া খাতুন একদিন তুলে দেন হাতে। খুচরো টাকাগুলো বাইরে রেখে বড় নোটগুলো যখের ধন জ্ঞানে লুকিয়ে সাজ্জাদ আসে বড় শহরে। যেদিকেই চোখ যায় কোচিং সেন্টারের সবকিছু ‘পাইয়ে’ দেওয়ার আয়োজন। পরোপকারের অলিখিত প্রতিযোগিতা। এসবের মধ্যেও রয়েছে পার্থক্য।

এক কোম্পানির বিজ্ঞাপন ভাষ্যে বলা হলো- চোর হতেও বুদ্ধি লাগে। আমাদের কোচিংয়ের বিকল্প নেই! হ্যাকার হওয়া লাভজনক! কথাটা পছন্দ হলো। আসলেই বোকা কিংবা অলস কারও পক্ষে ‘বড়’ হওয়া সম্ভব নয়। শহরে পা দিয়ে এ ভাবনা পোক্ত হয় আরও। গ্রামের হাসমত কাকার ঠিকানা এসেছে সে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা গন্তব্য খুঁজে হয়রান হয়েছে। হোল্ডিং নম্বর মেলে না, সমতা নেই একদম। কোথাও হয়তো দেখা গেল ৭৯, পরের হোল্ডিং ১০৫৮! অঙ্কের ফেরে জটিলতা বাড়ে। কপাল ভালো, সন্ধ্যার আবছায়ায় উল্টো তাকে খুঁজে পান কাকাই। সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমগো সাজ্জাদ বাবাজি না!’ নির্ভরতা খুঁজে পায় সে। সমস্যা কেটেছে। কাকাকে বলে, ‘হ্যাঁ। যুদ্ধ করতে এলাম!’

‘ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ এখানে অইব নাকি?’ অবাক হন হাসমত কাকা। তাকে আশ্বস্ত করে- ‘না। আরও বড় যুদ্ধ। ভর্তিযুদ্ধ!’
‘অস্ত্র-শস্ত্র কিনছ?’

কথা বলতে বলতে কাকার সঙ্গে এগিয়ে যায় সাজ্জাদ। মুরগির খোঁয়াড়ের মতো একটা রুমে ঢুকে হতাশই হয়। এঁদোগলির ছেদো রুমেও মানুষ থাকে! রাত বাড়লে দেখে, একজন না- চার চারজন মানুষের বাস! সদস্য বাড়লে ভাড়া কমে। দুদিন থেকেই ঘরে-বাইরে এক ধরনের ধন্দে পড়ে যায় সে। চার রাস্তার মোড়ে এসে বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে সমস্যা বাড়ে- কোন প্যাকেজটা নেবে! তৃতীয় দিনে তাকে পাকড়াও করে একজন নিয়ে গেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে। কর্মকর্তাদের কথার পাশাপাশি তাদের এসির বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। নিজেরাই উপযাচক হয়ে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করে।

এতদিনে সাজ্জাদ বুঝেছে, তার উপস্থিতিতে হাসমত কাকার মেসের সবাই বিরক্ত। চাপাচাপিতে ভালো ঘুম হয় না কারওরই। দিনের বেলায়ও অন্ধকার; পড়াশোনা কীভাবে করবে! কোচিং কর্মকর্তা মুকুল ভাই-ই সমস্যা থেকে উদ্ধার করল। নিয়ে গেল নিজেদের ওয়াইফাই সুবিধা সংবলিত মেসে। সাজ্জাদ ওয়াইফাই কী জানে না শুনে বাসার কেউই অবাক হলো না। এসবের সঙ্গে তারা পরিচিত। ক’দিন পর থেকে যা শুরু হলো তার সঙ্গে পরিচয় ছিল না সাজ্জাদের। মুকুল ভাইদের দেশি-বিদেশি নেতা, প্রয়াত এবং কারাবন্দি মহামানবদের সম্বন্ধে নতুন করে অবহিত হলো। একদিকে জামাই আদরে রাখা অন্যদিকে দলে জড়ানোর অপচেষ্টা ভালো লাগল না। গ্রামেই দেখেছে, দল করলে শত্রু-মিত্র বাড়ে। মিত্ররা উপকার করতে না পারলেও শত্রুরা সর্বনাশ করে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না ভুগেই!

একদিন কাউকে কিছু না বলে গ্রামের পথ ধরে সাজ্জাদ। পতিত কিছু জমি আছে তাদের, কর্ষণ করলে ফলন ভালোই হবে। স্থানীয় কলেজে ভর্তির সুযোগও আছে; নাই-বা হলো ‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার’!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper