ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আন্ত্রিক ক্রোধ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম

অধ্যাপক ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ৪:২০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০১৯

এটা সঠিক অর্থে রোগ নয়, কতগুলো আন্ত্রিক উপসর্গের সমষ্টি। একটা কথা প্রচলিত আছে যে পরিপাকতন্ত্রের মুখাবয়ব আছে (দি গাট হ্যাজ ফেইসেস) আমরা রাগ করলে, উৎকণ্ঠিত হলে, বিমর্ষ হলে অন্ত্রের মুখেও সে ছাপ পড়ে। যেমনি আমরা মনে মনে রাগ করলে মুখেও সে রাগভাব ফুটে ওঠে তেমনি। সব সময় রেগে, উৎকণ্ঠিত বা মুষড়ে থাকলে অন্ত্র এক সময় ক্ষেপে যায়, যে কোনো খাওয়া গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, পেটটাকে দুমড়ে-মুচড়ে তা বের করে দেয়। অনেকটা রাগী বাচ্চাকে জোর করে খাবার গেলানোর মতো। যে মুখে কিছু তুলে দিলে থু থু করে বের করে দেয়। রাগে গাল ফুলিয়ে রাখে।

সবচেয়ে বেশি লোক পরিপাকতন্ত্রের এ রোগে ভোগে। এক সময় এটাকে বৃহদান্ত্রের আক্ষেপ (স্পাস্টিক কোলন) বলা হতো। ৩০ শতাংশ লোক এতে আক্রান্ত। ২০-৪০ বছরের মহিলারা বেশি ভোগে। বাচ্চার গাল ফোলানোর মতোই পেট ফুলে (ফেঁপে) যায়, ব্যথা হয়, মল ত্যাগ করলে ব্যথা কমে, মলত্যাগের অভ্যাস বদলে যায়, ত্যাগের পরও ইচ্ছা থেকে যায়, খেলেই বাহ্য পায়, পেট গুড়গুড় করে, শ্লেষ্মা ও প্রচুর বায়ু নির্গত হয়। পরীক্ষা, বিয়ে, ইন্টারভিউ, যে কোনো দুশ্চিন্তায় উপসর্গ বাড়ে। কখনোবা অনির্দিষ্টকাল কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। এটা দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) বৃহদান্ত্রের রোগ। কেউ কেউ এটাকে আন্ত্রিক হাঁপানি (এস্থমা অব দি গাট) বলেন। মল পরীক্ষা (জীবাণু/কৃমি থাকে না), আল্ট্রাসনোগ্রাফি, অন্ত্রের যান্ত্রিক পরিদর্শন (সিগময়ডোস্কপি) করে ক্ষত বা ক্যান্সার খুঁজে পাওয়া যায় না। ভেতরটা লাল রাগী ও অত্যধিক সংকোচন-প্রসারণ দেখা যায়। ডাবল কন্ট্রাস্ট বেরিয়াম এনেমাতে বৃহদান্ত্রের আক্ষেপ নজরে আসে। ল্যাকটোজ সহ্যহীনতা, উপগলগ্রন্থি বৃদ্ধি (হাইপার প্যারাথাইরয়ডিজম) আছে কি না দেখতে হবে। রোগীকে আশ্বস্ত করুন।

অযথা দুশ্চিন্তা নিষেধ। যে সব খাবারে পেট খারাপ করে- শাক, সালাদ, তাজা ফল, তৈলাক্ত খাবার, দুধ তথা দুগ্ধজাত দ্রব্য ত্যাগ করে সহজপাচ্য (নরম ভাত, কাঁচকলা ভর্তা, পেঁপে, কদু, তেলহীন মাছ ইত্যাদি) খেতে হবে। সংকোচনরোধী মেবেভেরিন (১৩৫ মিগ্রা) বা জরুরি প্রয়োজনে লোপেরামাইড (দিনে দুবারের বেশি নয়) ও দুশ্চিন্তা দূর করতে মন-চিকিৎসা ছাড়াও এলপ্রাজোলাম (০.২৫ মিগ্রা), বিষণ্নতা কাটাতে এমাইট্রিপটিলিন (২৫ মিগ্রা) দেওয়া চলে। সব সময় বন্ধুবান্ধবের মাঝে হাসিখুশি, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে; মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতে হবে। একটু ভেবেচিন্তে খেলে রোগটি দমন সম্ভব।

 


অধ্যাপক ডা. হাফিজ উদ্দীন আহমদ


এমবিবিএস, এমসিপিএস,  এফসিপিএস

 

 

 
Electronic Paper