ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দাম নেই চা-পাতার

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
🕐 ৮:৪০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৯

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চা বাগানের পাতা সঠিক সময়ে বিক্রি দিতে না পারায় কেটে ফেলে দিচ্ছে চাষিরা। এছাড়া বাগান পরিচর্চায় দেখা দিয়েছে অনিহা। জানা যায়, ২০০০ সালের শুরুর দিকে তেঁতুলিয়ায় সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হলে অর্থনীতে নতুন এক মাইল ফলক যুক্ত হয়।

অর্থকরী ফসল হিসেবে চা আবাদ করে নগদ অর্থ পাওয়ায় গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা ধান চাষের জমি, সবজি চাষের জমি ও বাঁশ ঝাঁড় এবং বনজ ও ফলদ বাগান উড়াজ করে চা বাগান করেন। তখন চাষিরা বাগানের কাঁচা চা পাতা কারখানার মালিকদের কাছে ২৫ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। কিন্তু সম্প্রতি চা কারখানার মালিকেরা নানা অজুহাতে চা পাতার দাম কমাতে থাকে। চা চাষিরা এবিষয়ে একাধিক আন্দোলনও করেছে। তখন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা পাতা ক্রয়ের নির্ধারিত মূল্য প্রতি কেজি ২৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এ দামে বেশকিছু দিন চা পাতা কেনেন কারখানার মালিকেরা। সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই/১৯ পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চা কারখানার মালিক, চা বাগান মালিক ও জেলা প্রশাসন সুধীজনের সমন্বয়ে চারপাতা যুক্ত চায়ের কুঁড়ি কাঁচা পাতার মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা সভায় ১৬.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এক্ষেত্রে কোন চাষির পাতার মান ভাল না হলে ১০% হারে কর্তন করে চাষিদের মূল্য পরিশোধ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসকের ওই সভার সিদ্ধান্তগুলো ব্যতিরেকে কারখানার মালিকগণ ৩৫% থেকে ৪০% কর্তন করে ১২.৫০ টাকা দরে মূল্য পরিশোধ করেন। এক্ষেত্রে চাষিদের ভাউচারে কর্তনের হিসাব ও প্রতি কেজির মূল্য উল্লেখ না করে শুধুমাত্র মোট টাকা পরিশোধ করেন।

এ ব্যাপারে কোন চাষি অজুহাত দিলে তার পাতা ওই কারখানার মালিক নিতে অপরাগত প্রকাশ করেন। ফলে চা চাষিদের দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

কাজীপাড়া গ্রামের চা বাগানের মালিক প্রধান শিক্ষক কাজী মতিউর রহমান বলেন, চা চাষিদের অবস্থা অনেকটা তৎকালীন নীল চাষিদের মত হয়েছে। কারণ চা কারখানার মালিকদের একতরফা সিদ্ধান্তে কাঁচা পাতার যে মূল্যে কিনছে তা দিয়ে বাগানের সার-কীটনাশক ও পাতা তোলার কামলা খরচও হয় না। ফলে বাগানের পরিচর্চা করাও সম্ভব হচ্ছে না।

তেঁতুলিয়া হাসপাতালের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও চা বাগান মালিক ডা. আবুল বাশার বলেন, আমি ২ একর জমিতে চা বাগান করেছি। কিন্তু বর্তমানে চা পাতার দামের পতনের পাশাপাশি কারখানার মালিকরা নানা অজুহাতে পাতা কিনছে না। ফলে শ্রমিক দিয়ে বাগানের কাঁচা পাতা কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে।

সঠিক সময়ে পাতা বিক্রি দিতে না পারায় প্রতিমাসে আমাকে দেড় লাখ থেকে দু’লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাগান উপড়ে ফেলে দিতে হবে।

চা চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, কারখানার মালিকদের অজুহাদ ভারত থেকে অন্যান্য পণ্য আমদানীর সঙ্গে চা আমদানী করায় দেশীয় চা পাতা অকশন মার্কেটে দাম নাই। ফলে অনেক কোম্পানী ইতোমধ্যে মাইকিং করে চা পাতা কেনা বন্ধ রেখেছে। আর কিছু কারখানা চা পাতা কিনলেও দালালের মাধ্যমে পাঁচশ থেকে সাতশ টাকা ঘুষ দিয়ে একাধিক দিন ঘুরে চা পাতা দেওয়ার সিরিয়াল নিতে হয়।

নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্প, বাংলাদেশ চা বোর্ড, পঞ্চগড়ের প্রকল্প পরিচালক, ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, চা চাষিরা যেনো পাতার ন্যায্যমূল্য পান সেই জন্য চা বোর্ডের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কারখানার মালিক ও বাগান মালিকদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিকেরা সেই শর্ত এখনো বাস্তবায়ন করেনি।

 

 
Electronic Paper