পবিত্র হজ উদযাপিত
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৯:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৯
মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধির প্রার্থনার পাশাপাশি গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটির মাধ্যমে উদযাপিত হলো এবারের পবিত্র হজ। গতকাল শনিবার মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে বিশ্বের এ মহাসম্মিলন উদযাপিত হয়।
আজ রোববার শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানি শেষে মাথা মুণ্ডন করে পবিত্র মক্কা নগরীতে ফিরবেন হাজীরা। এরপর পবিত্র কাবা ঘর বায়তুল্লাহ শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন তারা। সৌদির স্থানীয় সময় অনুযায়ী, ১০ জিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার আগে জামারাতে আক্কাবায় (বড় শয়তানকে) গিয়ে ৭টি কঙ্কর ছুড়বেন ধর্মপ্রাণ এসব হাজী।
পরে ১১ ও ১২ জিলহজ প্রতিদিন তিন শয়তানকে ২১টি করে কঙ্কর মারবেন তারা। প্রথমে ছোট, তারপর মাঝারি ও সব শেষে বড় জামারাতে শয়তানের প্রতি পর্যায়ক্রমে কঙ্কর ছোড়ার মাধ্যমে হাজীরা শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকার শপথ নেবেন। হজের আগে বা পরে হাজিরা পবিত্র মদিনায় গিয়ে মহানবীর (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করে থাকেন তারা।
গতকাল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে পুরো আরাফাতের ময়দান মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় সবার চোখের কোণ গড়িয়ে পানি পড়ে। ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে সারা দিন অবস্থান, খুতবা শ্রবণ, জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায়, আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হজের মূল পর্ব।
গতকাল দুপুরে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরায় এবার হজের খুতবা দেন শাইখ ড. মুহাম্মদ বিন হাসান আল-শাইখ। তিনি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা বোর্ডের সদস্য এবং খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন হাদিস কমপ্লেক্সের প্রধান শাইখ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো গুরুত্ব দিয়ে হজের প্রতিবেদন সরাসরি সম্প্রচার করে। খুতবায় শাইখ ড. মুহাম্মদ বিন হাসান আল-শাইখ সব কাজে খোদাভীতি ও জীবনের প্রতিটি স্তরে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পবিত্র হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও সমৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন খতিব। দীর্ঘ লিখিত খুতবায় তিনি সঠিক ইসলামের পথে মুসলিমদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়াও করেছেন।
১৯৮১ সাল থেকে আরাফাতের ময়দানের খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন দৃষ্টিহীন ইমাম শাইখ আবদুল আজিজ। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর তিনি বার্ধক্যের কারণে অবসরে গিয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো হজের খুতবা দেন শাইখ আবদুর রহমান আস-সুদাইস। ২০১৮ সালে আরাফার ময়দানে হজের খুতবা দেন বিচারপতি শাইখ হুসাইন ইবনে আবদুল আজিজ ইবনে হাসান। এবারের হজের খুতবায় হারামাইন শরিফাইনের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে খতিব সৌদি রাজপরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজসহ রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করেছেন। খুতবায় মুহাম্মদ বিন সালমানের কথাও উল্লেখ করেন। তার দীর্ঘ হায়াত ও কল্যাণের জন্যও দোয়া করা হয়।
হজের খুতবায় মুসলমানদের আমল পরিশুদ্ধ করার প্রতি বিশেষ জোর দেওয়া হয়। পারস্পরিক আচরণ, লেনদেন পরিশুদ্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়। আমলের ত্রুটির কারণে মুসলিমরা দুর্যোগের শিকার হবে এমন সতর্কতাও দেওয়া হয়।
খুতবার শেষ দিকে হজের আহকাম জানিয়ে দেন খতিব। মুসলমানদের ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এ খুতবার মধ্য দিয়ে শেষ হলো হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। খুতবার পরপরই মসজিদে নামিরায় এক আজানে জোহর এবং আসরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। সূর্যাস্তের পর তারা মাগরিবের নামাজ না পড়ে রওনা হন মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করে রাতযাপন করেন।
আজ রোববার ফজরের পর হাজিরা রওনা হবেন মিনার উদ্দেশে। সেখানে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি করবেন। শয়তানকে পাথর মারবেন। এ ছাড়া বায়তুল্লায় গিয়ে তওয়াফ করবেন।
গত শুক্রবার শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা, তা শেষ হবে আজ। এরপর সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিকতা সেরে সারা বিশ্বের হাজীরা নিজ নিজ দেশের পথ ধরবেন।
এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম হজ করতে সৌদি আরবে গেছেন। হজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাতিম বিন হাসান কাদি জানান, কোনো ধরনের মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই এবার সফলভাবে ১৮ লাখ ভিসা অনলাইনে দিতে পেরেছেন তারা।