ঈদের পরই বিএনপিতে বড় রদবদল
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৯, ২০১৯
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। যে কারণে গত ৮ মাসে রাজপথে বিএনপির তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি বললেই চলে। স্থবিরতা দূর করে আবার সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। ঈদের পরই সম্মেলনের মাধ্যমে দল পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ব্যাপক রদবদলের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে বলে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা আর অপেক্ষায় থাকতে চান না। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি জনগণের সামনে তুলে ধরতে তারা আবার রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজপথে নামার আগে তারা দলকে আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনের পর দলের একাধিক সিনিয়র নেতা লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং পরামর্শ নিয়েছেন। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের মাধ্যমে সম্ভব নয়, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন। আর এই আন্দোলনে নামার আগে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। সেজন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে আগে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে হবে বলে তারেক রহমানকে জানান। তারেক রহমানও নেতাদের কথায় ইতিবাচক মত দেন।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৬ সালে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরে চলতি বছরের মার্চে বিএনপির সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। নেতাদের একটি পক্ষের অজুহাত ছিল চেয়ারপারসনকে জেলে রেখে সম্মেলন নয়। কিন্তু এখন তারা দেখছেন দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা মারা গেছেন। অনেকে নিষ্ক্রিয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজপথে আন্দোলন করতে নামার আগে দলকে পুনর্গঠিত করা দরকার। তাই এখন বেশিরভাগ নেতাই চান দলের যারা মারা গেছেন সে পদগুলো পূরণ এবং যারা অসুস্থ বা নিষ্ক্রিয় তাদের বাদ দিয়ে দলের ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের ওই জায়গায় বসিয়ে, তাদের নিয়ে আন্দোলনে নামতে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলছেন- এবারের কাউন্সিলে শীর্ষ তিন পদে বড় চমকের সম্ভাবনা কম। তবে পরিবর্তন আসছে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে। অসুস্থ নেতাদের বাদ দেওয়া হবে, পূরণ করা হবে শূন্যপদগুলো। এক্ষেত্রে নতুন মুখ স্থান পাবে। দলের তরুণ এক বা একাধিক নেতাকেও স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদগুলোতে বড় রকমের রদবদল হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এসব পদে পদে আসতে পারে নতুন মুখ। যোগ্য, ত্যাগী, তরুণ ও মেধাবীদের নেতৃত্বে আনা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়ের পর তৃণমূল পর্যায়ে হতাশা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে সেই হতাশা কাটিয়ে নতুন করে আন্দোলনে নামতে চান।
গত কাউন্সিলে বিএনপির শীর্ষ দুই পদে রাখা হয় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের দুই উত্তরসূরি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। এবারের কাউন্সিলেও দলটির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই থাকছেন এটি নিশ্চিত। খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তাকে (তারেক রহমান) আরও ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে।
দলের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ মহাসচিব পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। সবকিছু ঠিক থাকলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই থাকছেন এ পদে। যদিও দলের নেতাদের একটি অংশ তাকে বাদ দিতে চাইছে।
দলের স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে ৬ জন নতুন মুখ আসতে পারে। বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে পদোন্নতি দিয়ে এ পদে আনা হতে পারে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটির তিন বছরের মেয়াদ চলতি বছরের ১৯ মার্চ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে এবার কাউন্সিল করার পরিকল্পনা থাকলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে তৃণমূলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দলের জাতীয় কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কাউন্সিলের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচন হবে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে। তারা যাকে নেতৃত্বে চাইবেন এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে যারা যোগ্য এবং বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে অবদান রয়েছে, তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন বলে আশা করি।
সূত্র জানায়, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে ৬টি পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গতবার কাউন্সিলের পর দলের স্থায়ী কমিটি করা হয় তাতে দুটি পদ খালি রাখা হয়। এর মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। ফলে পাঁচটি পদ শূন্য হয়। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটিতে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরও তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এদিকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান দলীয় কর্মকা-ে অনুপস্থিত। প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারও শারীরিকভাবে ততটা ফিট নন। অসুস্থতার কারণে এই তিনজনের স্থানে নতুন তিনজনকে স্থান করে দেওয়া হতে পারে।
এসব পদে তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ জায়গা পেতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা দলের দুঃসময়ে নিজেদের সামনে রেখেছে এমন মধ্যসারির নেতারা এখন স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেতে লবিং তদবির শুরু করেছেন। পাশাপাশি সিনিয়র নেতারা যার যার মতো করে সক্রিয় হয়েছেন।
দলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দীন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী সোহেল, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মধ্য থেকে কয়েকজন এ পদে আসতে পারেন।
স্থায়ী কমিটির একটি পদে জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানের অন্তর্ভুক্তির দাবি রয়েছে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দলে থাকায় এখনই ডা. জোবাইদা রহমান কোনো পদে না রেখে পেছন থেকে সব কাজ তিনিই যেন করতে পারেন এমন কথাও বলছেন অনেকে। তাই অনেকে ধরেই নিয়েছেন জোবাইদা রহমানের এ মুহূর্তে স্থায়ী কমিটিতে আসার তেমন সম্ভাবনা নেই।