ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গোস্ট রাইটার ও তিন গোয়েন্দা

রকিব হাসান
🕐 ৯:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৭, ২০১৯

(গত ০৩.০৮.২০১৯ তারিখে ‘ঘোস্ট রাইটাররা কি স্বত্ব পাবেন’ শিরোনামে আমার একটা লেখা বেরিয়েছিল। যেহেতু টেলিফোনে সাক্ষাৎকারটা নেওয়া হয়েছিল এবং অনুলিখন করা হয়েছে, তাতে কিছু কিছু গোলমাল লক্ষ করছি লেখাটায়। যিনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলে লেখাটা আমি নিজেই এডিট করে বর্তমানে নতুনভাবে ছাপার ব্যবস্থা করলাম-রকিব হাসান)।

গত ০৩.০৮.২০১৯ তারিখের খোলা কাগজ পত্রিকায় ঘোস্ট রাইটাররা কি স্বত্ব পাবেন শিরোনামে আমার নামে যে লেখাটা বেরিয়েছে তাতে অনুলেখক একটা বড় ভুল করেছেন। আগেই বলেছি সাক্ষাৎকারটা নেওয়া হয়েছে টেলিফোনে। তাতেই হয়তো গোলমাল হয়ে গেছে অনেক কিছু। লেখার এক জায়গায় অনুলেখক লিখেছেন- ‘বিষয়টা স্পষ্ট করতে হবে কাজী আনোয়ার হোসেনকে। কিন্তু এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না তিনি।’ প্যারাগ্রাফটা যেভাবে লেখা হয়েছে কথাগুলো এভাবে বলিনি আমি।

সাক্ষাৎকার যিনি নিয়েছেন তার কিছু কিছু কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছি বিষয়গুলো সেবা প্রকাশনীর ব্যাপার। তাদের জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়। তখন সাংবাদিক সাহেব জবাব দিয়েছেন তারা (সেবা প্রকাশনী) কথা বলতে রাজি নন। আমি জবাব দিয়েছি তাহলে আমি কী করব? আশা করি খোলা কাগজ পত্রিকা এ ভুল স্বীকার করে নিয়ে তাদের উদারতার পরিচয় দেবেন।

সেবা প্রকাশনীতে শেখ আবদুল হাকিম এবং ইফতেখার আমিন মাসুদ রানার অনেক বই লিখেছিলেন। এখন বইয়ের স্বত্ব দাবি করছেন। এ বিষয়ে কেসও করেছেন তারা। কেসের বিষয়ে বিস্তারিত না জানলেও আমি জানি, অতীতে দুজনেই কাজী আনোয়ার হোসেনের নামে মাসুদ রানা লিখতেন। অর্থাৎ গোস্ট রাইটার। প্রশ্ন হলো গোস্ট রাইটাররা স্বত্ব দাবি করতে পারে কি না? এখন এটা জানার জন্য এ ব্যাপারে বিচারক কী রায় দেন সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম।

এখন আসি তিন গোয়েন্দার কথায়। তিন গোয়েন্দা আমার সৃষ্টি, আমি লিখতাম। আমি বেরিয়ে আসার পরও তিন গোয়েন্দা বেরোচ্ছে, শামসুদ্দীন নওয়াব লিখছেন। যখন তিন গোয়েন্দার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ২০০২-৩ সাল নাগাদ- আমি বেরিয়ে এসেছি। কেন এলাম? কেন রকিব হাসানের বদলে শামসুদ্দীন নওয়াব লিখছেন? পাঠক আঁচ করবেন, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো ক্যাচাল আছে। সত্যি কথাটাই বলি, তিন গোয়েন্দা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল আমার সঙ্গে। তাদের জানিয়ে দিলাম-আমি আর তিন গোয়েন্দা লিখব না। তখন সেবা থেকে বলা হলো আমরা অন্য কাউকে দিয়ে লেখাব। আমি বললাম, লেখান। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিল কী করে লেখাবেন, সিরিজটা তো আমার। তখন আমাকে বলা হলো-প্রিন্টার্স লাইনে লেখা আছে ‘প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত’। যখন এ কথাটা প্রথম তিন গোয়েন্দাতে লেখা হয় আমি তখন কপিরাইট সম্পর্কে কিছু বুঝতাম না। আইনের প্যাঁচগোছ ও কপিরাইট সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। পরে যখন কিছুটা বুঝলাম তখন দেরি হয়ে গেছে। আদালতে যেতে পারতাম। কিন্তু আদালত যদি প্রশ্ন করে এতদিন আসেননি কেন? আপনি কি কিছু বোঝেন না? লজ্জা পাব। তাই আর আদালতে যাইনি। বোকার মতো ঝামেলা এড়ালাম।

তারপর একটা সময় তিন গোয়েন্দা ছেড়ে চলে এলাম আমি। ভাবলাম, ছাড়লাম যখন পেপারব্যাকে আর লিখবই না। তিন গোয়েন্দার প্রধান তিন চরিত্র কিশোর মুসা রবিনকে নিয়ে আবার লিখব। সেবা থেকে বেরিয়ে ‘কিশোর মুসা রবিন’ নামে তিন গোয়েন্দার নতুন সিরিজ লিখলাম। ভালোই সাড়া মিলল বাজারে। ধীরে ধীরে এ সিরিজটাও দাঁড়িয়ে গেল। তবে এটাতে ‘প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত’ লেখার ভুল আর করলাম না। যাই হোক, কিশোর মুসা রবিনের সিরিজ গত বছরের বইমেলায় বেস্টসেলার ছিল। তিন গোয়েন্দা হাতছাড়া হয়ে গেছে সেজন্য আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ এখন লেখার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হয়েছে। প্রথমা, কথাপ্রকাশ, অবসর, কাকলী, অনন্যার মতো বড় বড় প্রকাশনী আমার বই ছাপে। এটা বড় প্রাপ্তি।

সেবার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। ওখানে তিন গোয়েন্দার ১৬০টার বেশি তিন গোয়েন্দা লিখেছি। এখানে একটা তথ্য দিয়ে রাখা দরকার। আমি বেরিয়ে আসার পর পর আমার নামে ছাপা হয়েছে তিন গোয়েন্দার ১০টা বই।

বলা হলো, কভার তো করা আছে বইগুলো না ছাপলে সেবা লোকসানে পড়বে। আমি বললাম ছাপা হোক, আমার কোনো আপত্তি নেই। বইগুলো ছাপার পরে এর বিনিময়ে আমাকে কিছু সম্মানীও দেওয়া হয়েছে। ওই ১০টা বইয়ের পর থেকে শামসুদ্দীন নওয়াব লিখছেন তিন গোয়েন্দা।

যাই হোক, জীবনের শেষপর্যায়ে এসে লেখক হিসেবে আমি সফল। শেখ আবদুল হাকিম এবং ইফতেখার আমিনের মতো খেদ নেই। কেসও করতে যাই না।

রকিব হাসান : লেখক
তিন গোয়েন্দা সিরিজ

 
Electronic Paper