ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি: বাংলা

সবুজ চৌধুরী
🕐 ৩:০২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০১৯

রচনা : একুশে ফেব্রুয়ারি/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ভূমিকা :
‘মাগো ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না।
বলো মা, তাই কি হয়?’
- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, কবির এই চেতনাটিকেই যেন ধারণ করে বাঙালি জাতি খুঁজে পেয়েছিল এক নতুন আত্মমর্যাদা। বাঙালি জাতীয় জীবনে এ এক গৌরবময় দিন, এ এক স্মরণীয় মুহূর্ত। বাঙালির সব মুক্তি আন্দোলনের উৎস একুশে ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি জাতি রক্তদানের পুণ্যস্নানে পবিত্র হয়ে বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ দিনে।

একুশের পটভূমি
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে মতবিরোধ দেখা দেয়। পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতারা জোর করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। পাকিস্তানের ৫৪.৬% মানুষের মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৬% মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার এ ষড়যন্ত্রটি বাঙালি জাতি বুঝতে পেরেছিল।

তাই ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট ‘তমুদ্দুন মজলিস’ গঠিত হয়। এ সংগঠন থেকেই প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করা হয়। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় সর্বপ্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কংগ্রেস সদস্য কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।
১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ কার্জন হলের এক সমাবর্তনে ঘোষণা করেন, ‘Urdu only, and Urdu shall be the state language of pakistan.’ তখন দেশব্যাপী এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ১৯৫০ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং ১৯৫২ সালে ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন একই ঘোষণা দিলে বাঙালি মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সেই ক্ষোভ থেকেই ১৯৫২-এর ৩০ জানুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এবং ওই দিনই ‘সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এই দিন দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে।

২১শে ফেব্রুয়ারির উক্ত কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য তৎকালীন গভর্নর নূরুল আমীন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু বাঙালি ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঐ দিন মিছিল বের করে। মিছিলটি হাই কোর্টের মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহিদ হন এবং বহুসংখ্যক লোক আহত হন। এর ফলে সারা বাংলায় আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় এ ঘটনার প্রতিবাদে তিন দিন লাগাতার হরতাল পালিত হয়। এটিই ছিল ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন।

বাঙালি হৃদয়ে একুশের চেতনা
ভাষা আন্দোলনের এই ঘটনাটি বাংলাদেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। সব ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশার মানুষ বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনায় একাত্ম হয়। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সব মানুষ একই পতাকাতলে হাজির হয়। সবার মুখে যেন একই সুর, একই আকাক্সক্ষা, একই দাবি। সব বাঙালিকে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাটি ঐক্যসূত্রে গেঁধে দিয়েছিল।

একুশের প্রেরণা
একুশ বাঙালি জাতীয় প্রেরণার উৎস। একুশ বাঙালির ফাগুনের লাল আগুন। একুশ আমাদের চেতনায় বিপ্লবের, বিদ্রোহের, প্রতিবাদের বীজমন্ত্র। একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে বাংলার স্বাধীনতা। একুশ আমাদের জীবনের গভীরতায় অনুভূতির এক অপরিমেয় শক্তির দৃপ্ত জাগরণ। যে জাগরণ একদিন বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।

আন্তর্জাতিকভাবে একুশের মূল্যায়ন:
১৮৮টি দেশ নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ‘ইউনেস্কো’ আনুষ্ঠানিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব করে। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে প্রস্তাবটি ইউনেস্কো ৩০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তারপর থেকে ইউনেস্কোর সব সদস্য রাষ্ট্র প্রতি বছর এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে।

উপসংহার
বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোর বৃহত্তম ও মহত্তম অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বর্তমান বিশ্বে বাঙালিদের ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগের দিনটি প্রতিটি দেশই শ্রদ্ধাভরে উদযাপন করে। তাই আমরা বলতে পারি, একুশ আমার গর্ব, একুশ আমার অহংকার। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ বাঙালিকে মর্যাদার এক নতুন উচ্চতায় আসীন করেছে।

সবুজ চৌধুরী
সহকারী শিক্ষক
সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper