দেশে দেশে সর্বনাশা মহামারি
প্লেগ
বিবিধ ডেস্ক
🕐 ১:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৯
মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি বীভৎস, অমানবিক ও কালো ইতিহাস বহন করছে ‘বিউবনিক প্লেগ’ বা ব্ল্যাক ডেথ। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই মহামারীর কবলে পড়ে ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। প্রথমে এই রোগে আক্রান্ত নারী ও পুরুষ কব্জি বা বগলের কোনো স্থানে টিউমারের মতো কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে। ধীরে ধীরে সেটি বড় হতে থাকে। এক পর্যায়ে এটি আপেল বা ডিমের আকৃতির মতো ধারণ করে ও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কালো রঙ্গের এই ফোঁড়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি তার সারা শরীরে এটি দেখতে পায়। এক পর্যায়ে এগুলো পচে যায় ও পুঁজ বের হতে থাকে এবং মাত্র তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত্যু।
১৩৪৭ সালের অক্টোবর মাস। কালো সমুদ্রের ওপর বহু দূরত্ব অতিক্রম করে এক ডজন ব্যবসায়িক জাহাজ সিসিলি বন্দরে পৌঁছেছে। বহুসংখ্যক লোক জাহাজগুলোকে স্বাগত করার জন্য সমুদ্রের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন। জাহাজ বন্দরে লাগানো হয়েছে কিন্তু কোনো ব্যক্তি জাহাজ থেকে বাইরে বের হলো না। দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর তারা নিজেরাই জাহাজের ওপর ওঠে এবং জাহাজে উঠেই তাদের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। জাহাজে পাওয়া মৃতদেহ আর মৃতদেহের মাঝে কিছু জীবিত মানুষ যারা কেবল মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। আসলে এই মৃত্যু হয়েছে সেই সময়ের ত্রাস মহামারী প্লেগে।
ব্ল্যাক ডেথকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী বলে মনে করা হয়। বেশির ভাগ গবেষক দাবি করেছেন, এই মহামারী চীন থেকে শুরু হয়েছিল। চীনে এই রোগ কীভাবে শুরু হয় তা আজো একটি রহস্য; কিন্তু সেই সময় চীনে বহুবার প্লেগ ছড়িয়েছিল। ১৩৪০ সালের পর আবার একবার চীনে প্লেগ দেখা দিল কিন্তু এবার প্লেগ কেবল চীনের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল না। ব্যবসায়িক দিক থেকে যোগাযোগের জন্য মধ্য এশিয়া, এশিয়া আর দক্ষিণ ইউরোপের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য বহু বছর আগেই স্থল আর জলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। যাকে সিল্করোড বলা হয়ে থাকে; আর সিল্করোড এজন্য বলা হয় কারণ ওই রাস্তায় সিল্কের ব্যবসা হতো।
চতুর্দশ শতাব্দীতে যখন চীনে প্লেগ ছড়ায় তখন প্লেগ এই রাস্তায় ইউরোপে পৌঁছে যায়। কীভাবে পৌঁছায়? আসলে প্লেগের জীবাণু কালো ইঁদুরের সঙ্গে ১৩৪৬ সালে চীনের ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় পৌঁছে। ক্রিমিয়া থেকে যখন জিনিস ভর্তি জাহাজকে ইতালি উদ্দেশ্যে ছাড়া হয় তখনই প্লেগের জীবাণু ইঁদুরের মাধ্যমে জাহাজে চলে আসে। তারপর এইসব জীবাণুর সংক্রমণের কারণে জাহাজে থাকা লোকের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে আর বহু লোকের জীবন শেষ হয়ে যায় আর অনেকের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। ১৩৪৭ সালে যখন এই জাহাজ ইউরোপে পৌঁছায় তখন সেখানে তাদের নিতে আসা বহুসংখ্যক মানুষ বন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তারা দেখেন জাহাজ একটি মৃত মানুষের স্তূপে পরিণত হয়েছে আর অসুস্থ মানুষকে কোনোপ্রকারে জাহাজ থেকে বের করা হয়। মানুষ ভয়ে আতঙ্কে অবাক হয়ে যায় তারা বুঝতে পারছিল না যে, এসব কেন এবং কীভাবে হয়েছে। সেসময় প্লেগের ফলে ইউরোপের জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। ব্ল্যাক ডেথের কারণে মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাসও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ মানতে শুরু করেন, ঈশ্বর মানুষের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন আর এজন্যই এমনটা হচ্ছে। আবার কিছু লোক একে কালো জাদু বলতে থাকে। এসব কিছুর সঙ্গে ইউরোপ সংঘর্ষ করে আবার তার জায়গায় ফিরে আসে। তবে ফিরে আসতে বহু বছর সময় লেগে যায়।