ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেশে দেশে সর্বনাশা মহামারি

ডান্সিং প্লেগ

বিবিধ ডেস্ক
🕐 ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৯

মধ্যযুগীয় ফ্রান্সের একটি শহর স্ট্রাসবার্গ। ১৫১৪ সালের জুলাই মাসের কথা, রেনেসাঁ তখন কেবল শুরুর দিকে। আর ১০ দিনের মতো দিব্যি নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন ফ্রাঁউ ট্রফিয়া নামক এক গৃহবধূ। হঠাৎ আশাপাশের সবাইকে চমকে দিয়ে সকালবেলা নাচতে শুরু করলেন তিনি। নাচতে নাচতে বেরিয়ে এলেন প্রধান সড়কে।

 

বলা নেই, কওয়া নেই রাস্তায় এমন করে কাউকে নাচতে দেখলে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন। আর রাস্তার লোকজন যে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। একই ঘটনা ঘটে ট্রফিয়ার সঙ্গে। দর্শকরা মজা পেয়ে হাসতে লাগল, অত্যুৎসাহী কয়েকজন হাততালি দিয়ে উঠল এবং তারস্বরে চেঁচিয়ে ট্রফিয়াকে বাহ্বা দিতে লাগল। লোকজন ভাবতে বাধ্য হলো, ট্রফিয়াকে কি তবে ভূতে ধরেছে?

কিছুদিনের মধ্যে বোঝা গেল এটা কোনো ভূতের কারসাজি নয়। ট্রফিয়া নাচছে তো নাচছেই। তার চোখে-মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই। ক্রমেই দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে সে নাচ। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা, রাত হয়ে গেল; তারপর এলো পরদিন সকাল। কিন্তু নাচ থামল না ট্রফিয়ার। পাক্কা ছয় দিন ধরে বিরামহীনভাবে নেচেই চলল সে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরও প্রায় ৩৪ জন যোগ দিল তার সঙ্গে। মাস শেষে সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়াল চারশতে! এই ড্যান্সিং ম্যানিয়ার ফলে প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন করে নাগরিক মৃত্যুবরণ করতে লাগল। শরীরের ওপর দিয়ে অমানুষিক ধকল যাওয়ার কারণে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক আর ক্লান্তিতে নিঃশেষিত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল তারা।

আগুন নিয়ে খেলতে মাঠে নামতে বাধ্য হলো সরকারি কর্মকর্তারা। অনেক ভেবেচিন্তে নাচানাচি বন্ধ করার উপায় হিসেবে সংগীতজ্ঞদের ভাড়া করে আনলেন তারা। ব্যাপারটা অনেকটা বিষে বিষ ক্ষয়ের মতো। শহরের মাঝখানে বিশাল এক মঞ্চ তৈরি করে দাঁড় করিয়ে দিলেন তাদের, কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন ঘটা করে নাচের শখ এবার অচিরেই পালাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হলো তার ঠিক উল্টো। ড্যান্সিং ম্যানিয়া নামক এই পাগলামিতে দলে দলে যোগ দেওয়া শুরু করল শহরের বাসিন্দারা। গান-বাজনার তালে তালে মৃত্যু হয় আরও বেশি সংখ্যক মানুষের।

ড্যান্সিং ম্যানিয়ার শারীরিক বা রাসায়নিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে এগিয়ে আসেন ইউজেন ব্যাকম্যান। ১৯৫২ সালে তিনি ও তার সমসাময়িক কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেন, স্যাঁতসেঁতে রাই থেকে জন্ম নেওয়া এরগোট নামক এক ধরনের রোগাক্রান্ত উদ্ভিদই এই ড্যান্সিং ম্যানিয়ার জন্য দায়ী।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper