ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মশক সাম্রাজ্যে

শফিক হাসান
🕐 ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৯

আম, জাম ও গমবিষয়কমন্ত্রী মোখলেসুর রহমান কথা বলতে পছন্দ করেন। নিজ ‘সীমানা’র বাইরে বেফাঁস মন্তব্য করায় সরব হয়ে উঠেছে দেশের ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোস্যাল মিডিয়া। যৌক্তিক কথাই বলেছেন তিনি- ‘মশা না কামড়াইয়া চুমা দিব নিহি?’

মশা, মাছি ও পাখিবিষয়কমন্ত্রীকে একটু ‘সুরক্ষা’ দেওয়ার জন্যই এ বক্তব্য। মন্ত্রণালয় ভিন্ন হতে পারে, শেষ পর্যন্ত সমালোচনার তীরটা যায় সরকারের দিকেই! শ্লেষের পর সুরক্ষার পরামর্শও দিয়েছেন- করলা ভাজি, নিমপাতার ভর্তা ও নিয়মিত চিরতার পানি খেলে মশা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে। হুল ফোটালেও সুবিধা করতে পারবে না। এসব পথ্য খাওয়ার ফলে রক্তের স্বাদ কমবে। তেতো রক্তে মশার রুচি হবে না।

এ প্রেসক্রিপশনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ডাক্তারদের একাংশ। তারা বলছেন, এটি বিজ্ঞান ও বাস্তবতাবিবর্জিত। অন্যদিকে আরেক শ্রেণির ডাক্তার বিবৃতি দিয়েছেন- অগাধ পাণ্ডিত্যের কারণে তিনি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও নিতে পারবেন।

পক্ষে-বিপক্ষে যে যা-ই বলে, তুমুল সমালোচনা হয় ফেসবুকে। এসব দেখে মন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেছেন, ‘ফেসবুক হইল আজাইরাদের খোঁয়াড়!’ তাতে ফেসবুকবাসী ক্ষেপল আরও- দেশ যখন ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগোচ্ছে, তখন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে এনালগ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। নানামুখী সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্ত হয়েছে বিরোধী দলের বক্তব্য-আন্দোলন। ‘একটি মশাও মারতে পারেননি কোনো মেয়র’ জাতীয় খোঁচায় অতিষ্ঠ হয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মেয়র প্রমাণ দেখালেন তিনি অকর্মণ্য নন! মশারির ভেতর থেকে তিনটি মশা মেরে রক্তাক্ত সেলফি আপলোড দিলেন ফেসবুকে। তাতেও বইল সমালোচনার নার্গিস-ফণি- মেয়রের মশারিতেই এডিস মশার বিচরণ, নগরবাসীর নিরাপত্তা কোথায়!

এর মধ্যেই দুর্বৃত্ত শ্রেণি ফন্দি আঁটল। তাদের দাবি, কয়েকটি এলাকাকে মশা-দুর্গত ঘোষণা করা হোক। তাতে দেশি-বিদেশি ত্রাণ, রিলিফের ওষুধ আসবে। বড় জায়গা থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, পাতি নেতা- সবার টুপাইস ইনকামের মোক্ষম সুযোগ এখন।

উপর্যুপরি সমালোচনা থেকে বাঁচতে মশা-দুর্গত এলাকা ঘোষণার পক্ষে সায় দিলেন আম, জাম ও গমবিষয়কমন্ত্রী। পরদিন ৮ কলাম ইঞ্চিতে দৈনিক পত্রিকায় ও টেলিভিশন পর্দায় এ বক্তব্যের সমালোচনা হলো তুমুলভাবে। এরপর প্রতিদিনের পত্রিকায় ছাপা হতে লাগল মন্ত্রীর ঢাউস সাইজের রঙিন ছবি। বক্তব্যসহ তাকে টেলিভিশনে দেখানো শুরু হলো দিনভর। এতে মন্ত্রীর ছোট শ্যালিকার বড় মেয়ে খুকি বিমলানন্দ বোধ করল। যখন সংবাদ উপস্থাপকের কণ্ঠে ঘোষিত হয় মন্ত্রীর নাম, পর্দায় ভেসে ওঠে পাঞ্জাবি পরা ছবি, খুশিতে লাফিয়ে ওঠে খুকি- ‘ওই তো খালুজান’!

লাফালাফি চলতে থাকলে একদিন সে পায়ে চোট পেল। মন্ত্রীও খুকির প্রতি দারুণ প্রসন্ন ছিলেন। এমন অন্ধ ভক্ত কমই আছে। তৎক্ষণাৎ খুকিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলো- ‘খোদ মন্ত্রীর ঘরেই ডেঙ্গুর বাসা! বিস্তারিত আসছে...।’

আন্দোলন জমাতে না পারা বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি অনলাইন লিখল- অন্যদের পরামর্শদাতা মন্ত্রী নিজেই ডেঙ্গুতে কাবু! সমালোচনা ও জনরোষ এড়াতে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন! মন্ত্রী প্রতিবাদ জানালেন। এও বললেন, শীঘ্রই অনলাইন নীতিমালা আসছে! এরপর এডিট করে প্রতিবেদনের সুর নরম করা হলো। পরদিন প্রকাশিত হলো সচিত্র ফিচার- অবসরে মন্ত্রী বই পড়তে ভালোবাসেন। তার প্রিয় বই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্পগুচ্ছ! দলের হাইকমান্ড থেকে সতর্ক করা হলো বেফাঁস মন্ত্রব্য না করার জন্য। কিছুদিনের জন্য মুখে তালা দিলেন তিনি। সপ্তাহখানেক পরে মশারির ভেতরে অফিস করা একটি ছবি আপলোড করলেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। ছবিটি রাতারাতি ভাইরাল হলো।

দেশবাসীকে মোখলেসুর রহমান পরামর্শ দিয়েছেন- ঘরে-বাইরে যেখানেই থাকুন, সঠিক ‘পদ্ধতি’ এটাই! সবাই মশারি কিনুন, অসমর্থ হলে আমাদের জানান! এক কোটি মশারি বানানো হচ্ছে! বিপদ বাড়ল মশকমন্ত্রীর। ফেসবুকবাসী বলা শুরু করল- মশারিই যদি টানাতে হয়, তবে মন্ত্রীমশাই কেন, মেয়র কেন- তারা কি বাঘ-ভল্লুক মারবেন! সমালোচনায় অতিষ্ঠ মন্ত্রী কানে তুলা দিলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, আগামী ছয় মাসেও তুলার স্থানচ্যুতি ঘটাবেন না!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper