ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বৃষ্টি হবে বন্যা বাড়বে

কুন্তল দে
🕐 ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯

আষাঢ় মাসের প্রথম ভাগ পেরিয়ে গেলেও দেখা মিলছিল না বৃষ্টির। ভারতের কেরল হয়ে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে আসতে লাগছিল দীর্ঘ সময়। বর্ষার শুরুতে স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় আশঙ্কা ছিল প্রকৃতি এবার রুদ্ররূপ দেখাতে পারে। সে আশঙ্কাই যেন সত্যি হলো। গত সপ্তাহেই বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগে শুরু হয়েছিল ভারী বৃষ্টি। পার্বত্য চট্টগ্রামে তো অতি ভারী বৃষ্টি। রাঙ্গামাটিতে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বিরামহীন বৃষ্টিতে দেখা দিতে শুরু করল বন্যা, জলাবদ্ধতা। সেই বৃষ্টি ছড়াতে শুরু করল সারা দেশে।

গত দুই দিনে সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতের সিকিম, আসাম ও মেঘালয়েও পড়ছে মুষলধারে বৃষ্টি। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে এ পর্যন্ত ১০ জেলা প্লাবিত হয়েছে। সবগুলো প্রধান নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে প্লাবিত হওয়ার মুখে আরও চার জেলা। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর এবং বন্যা পূর্বাভাষ ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ এবং তৎসংলগ্ন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী কয়েকদিন ভারী ও অতিভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির এ প্রবণতা থাকতে পারে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করা হচ্ছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ভারী বর্ষণের কারণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সর্বশক্তি দিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি ও দুর্গত বিষয়ে সরকার দৃষ্টি রাখছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও এ নিয়ে সজাগ ও সচেতন হতে হবে।’

প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর জেলা প্লাবিত হতে পারে। দুর্গত জেলাগুলোতে সাড়ে ১৭ হাজার টন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দুই কোটি ৯৩ লাখ নগদ টাকা।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৯৩টি নদ-নদীর পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৭৭টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ১৪টি পয়েন্টে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের সিকিম, আসাম ও মেঘালয়ের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল পাঠানো বন্যার সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের সবগুলো প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ (জামালপুর) পয়েন্ট, চিলমারি (কুড়িগ্রাম) ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্ট, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া (রংপুর) পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ^রী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী ও সাংগুসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও লালমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, বাংলাদেশে বন্যায় যে পানি হয় এর ৯২ ভাগই আসে ভারত থেকে। ভারতের ব্রহ্মপুত্রের যে বেসিন সেখানে এখন বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে যমুনায় যে কয়টি পয়েন্ট সবকটি পয়েন্টেই পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

দেশজুড়ে বৃষ্টি আজও
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাঙ্গামাটিতে ১৬৫, হাতিয়ায় ১৩৫, সীতাকুণ্ডে ১২৯, টাঙ্গাইলে ১২২, কুতুবদিয়ায় ১১১, সন্দ্বীপে ১০১ ও চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাত বাড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হয়। এ সময় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। দুপুরের পর বৃষ্টির দাপট বাড়তে থাকে দেশের মধ্যাঞ্চলে। দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ঢাকায়।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে-ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ খোলা কাগজকে বলেন, বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এ কয়দিনে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে দেশের কোনো কোনো নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং সেটি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদীর পানি কতটুকু বাড়বে তা এ বৃষ্টির মাত্রার ওপর নির্ভর করছে।

 
Electronic Paper