ইংল্যান্ডে ভস্ম অস্ট্রেলিয়া
ক্রীড়া প্রতিবেদক
🕐 ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯
২৯ আগস্ট ১৮৮২। চরম উত্তেজনাপূর্ণ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় ইংলিশরা। ক্রিকেটের জন্মদাতারা ওই ফলাফলকে নিয়েছেন ‘চরম অপমান’ হিসেবে। দেশটির সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্যা স্পোর্টিং টাইমস’ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিল ‘এই পরাজয় ইংলিশ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করেছে এবং ছাইগুলো প্রদান করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।’ ১৩৭ বছর পর গতকাল ইতিহাস ঘুরে গেছে ১৮০ ডিগ্রি। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মাটিতেই ভস্মীভূত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম সেমিফাইনালের মতো গতকাল এজবাস্টনে বৃষ্টি হয়নি। তবে অস্ট্রেলিয়া যে ঝড়ের কবলে পড়ে উড়ে গেছে বিশ্বকাপ থেকে, সেটির কোনো আগাম বার্তা ছিল না। কেউ কল্পনাও করেননি। খোদ ইংলিশ ক্রিকেটাররাও নিশ্চয়ই ভাবেননি, এমন ঝড় তুলতে পারবেন। কী ব্যাটিং আর কী বোলিং কাল ইংলিশরা যে তাণ্ডব চালিয়েছেন স্মিথদের ওপর, অন্তত সেমিফাইনালে কেউ এমনটা আশা করেননি। ওকস-আর্চারদের বোলিং তোপের সামনে ধুঁকতে ধুঁকতে অজিরা তুলেছেন ২২৩ রান। এ রান তাড়া করতে নেমে স্টার্ক-কামিন্সদের বিধ্বস্ত করে ইংলিশরা জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ৮ উইকেট এবং ১০৭ বল হাতে রেখেই!
এর মধ্য দিয়ে দ্বাদশ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গী হলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ২৭ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো ইংলিশদের। সেই কবে ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিলেন তারা, এরপর আর ওমুখো হতে পারেননি। অন্যদিকে ২৩ বছর পর অবসান হবে আরেক অপেক্ষার। ১৪ জুলাই নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব। ফাইনালে যাওয়া দুটি দলের কেউ-ই যে এখন পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখতে পারেননি।
প্রথম সেমিফাইনালের মতো গতকাল দ্বিতীয়টাতেও বোলাররা ত্রাস হয়ে উঠলেন ব্যাটসম্যানদের সামনে। ইংলিশ বোলারদের সুইংয়ের সামনে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয় ব্যাটসম্যানদের। শুরুতেই ক্রিস ওকস হয়ে উঠেছিলেন হন্তারক। সঙ্গে যোগ হয়েছিল জফরা আর্চারের গতি। আর্চারের বলে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ প্রথম ফিরলেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে। এরপর একে একে ওকস তুলে নিলেন ডেভিড ওয়ার্নার আর পিটার হ্যান্ডসকম্বকে। ওকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা বুঝতেই পারেননি ওয়ার্নার। ব্যাট ছুঁয়ে সোজা সেটি চলে গেল স্লিপে জনি বেয়ারস্টোর বিশ্বস্ত হাতে।
১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমতো কাঁপছে অস্ট্রেলিয়া। অনেকেই শঙ্কা করছিলেন হয়তো বিপর্যয়কর কোনো সংগ্রহ দেখতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। তবে ‘লড়াকু অস্ট্রেলিয়া’ অভিধাটি নতুন করে সবাইকে দেখালেন স্টিভ স্মিথ আর অ্যালেক্স ক্যারি। ১০৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়লেন দুজন মিলে।
জুটিটি জমে যাওয়ার পর ইংলিশদের কপালে যখন চিন্তার ভাঁজ, তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। ক্যারিকে ফিরিয়ে তার শুরু। ৫ বলের মধ্যে তিনি ফেরান মার্কাস স্টয়নিসকেও। ২৮ ওভারের দ্বিতীয় বলে আদিলের লেগ স্টাম্পের ওপর পড়া বলটিকে ফ্লিক করে তুলে দিয়েছিলেন ক্যারি। কিন্তু ডিপ মিড উইকেটে অপেক্ষায় ছিলেন বদলি ফিল্ডার জেমস ভিনস, ক্যাচটি ধরে নেন সহজেই। ১০৩ রানের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর মার্কাস স্টয়নিসে ভরসা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু তিনি চার বলের বেশি টিকতে পারেননি। রশিদের গুগলিতে পুরোপুরি পরাস্ত হয়ে পড়ে যান এলবিডব্লিউর ফাঁদে।
আবারও পথ হারায় অস্ট্রেলিয়া। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। টেকেননি প্যাট কামিন্সও। ২৩ বলে ২২ রান করে ম্যাক্সওয়েল ফিরেছেন জফরা আর্চারের বলে অধিনায়ক মরগানের ক্যাচ হয়ে। এরপর আদিলের বলে প্যাট কামিন্স স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন জো রুটকে। তারপরেও বড় ভরসা হয়ে ছিলেন স্মিথ। মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ৫১ রানের এক জুটিও গড়লেন। ২৯ রান করে স্টার্ক ফেরেন ওকসের বলে। এরপর অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা আড়াইশ ছুঁতে পারেনি স্মিথ রান আউট হয়ে ফেরায়। বেহেরেনডর্ফকে বোল্ড করেছেন মার্ক উড।
আর্চার ও ক্রিস ওকস শুরু থেকেই বাউন্স পাচ্ছিলেন। লেংথ ধরে রেখে গতিময় বল করায় অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি। মাঝে আদিল রশিদের ঘূর্ণিতে আরও এলোমেলো হয়ে যায় অজিরা। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আদিল ও ওকস। আর্চার নিয়েছেন ২টি। উড একটি।
২২৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো উদ্বোধনী জুটিতেই যোগ করেন ১২৪ রান। অস্ট্রেলিয়াও ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায় তাতে। স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন বেয়ারস্টো। ৪৩ বলে ৫ চারে ৩৪ রান করেছেন তিনি। স্কোরবোর্ডে আরও ২৩ রান যোগ হতে ফেরেন রয়। কামিন্সের শিকার হওয়ার আগে ৬৫ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৮৫ রান করেন। বাকি কাজটা সেরেছেন ইংল্যান্ডের ‘দুই অধিনায়ক’। টেস্ট অধিনায়ক জো রুট ৪৯ ও ওয়ানডে অধিনায়ক মরগান ৪৫ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন।