ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে ঢাকার বাইরেও

চট্টগ্রাম গাজীপুর কুষ্টিয়ায় আক্রান্ত ৮

সুলতান মাহমুদ
🕐 ৯:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৯

রাজধানী ঢাকার পর এবার ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর। এর মধ্যে গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়ায় ভাইরাসজনিত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর চলতি মাসের ১১ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৪৬ জন।

চলতি বছর এ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বেসরকারিতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এতদিন শুধু রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও সম্প্রতি ঢাকার বাইরে গাজীপুর, কুষ্টিয়া এবং চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত তিন দিনে গাজীপুর, কুষ্টিয়া এবং চট্টগ্রামে হাসপাতালে কমপক্ষে ৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা এখনো কম হলেও যে কোনো সময় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কুষ্টিয়া শহরের সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার তরুণ সাহা বলেন, চলতি মাসের ১ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত ১০ জন রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন তাদের ক্লিনিকে। তার মধ্যে চারজন রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে গেছে। আগে কয়েক দিন জ্বরে ভোগার পর গায়ে র‌্যাশ ওঠা, চোখ লাল হওয়া ও রক্তে প্ল্যাটিলেটের পরিমাণ কমে যেত। কিন্তু এখন প্রথম দিন থেকেই রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমতে থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে দেরি করলে তাদের জীবনঝুঁকিতে পড়ছে। এ বছর সেরোটাইপ-৩ আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চার ধরনের ডেঙ্গুর মধ্যে এ ধরনের ডেঙ্গু মারাত্মক। এতে দ্রুত প্লাটিলেট কমে যাওয়া এবং কিডনি, ফুসফুস ও লিভার সংক্রমণ হওয়ার নজির মিলছে। সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পপুলার ও স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নারী চিকিৎসক ডা. নিগার নাহিদ মারা যান। এ মৌসুমে আরও দুই জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন- ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসকদের জন্য নতুন করে চিকিৎসা গাইডলাইন তৈরি করেছেন তারা। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, কী ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে আর কী কী ওষুধ বর্জন করতে হবে সে সম্পর্কে গাইডলাইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৫৮৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৭৫০ এবং ১১ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে এপ্রিলে দুজন ও জুলাইয়ে একজনসহ মোট তিনজনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছে এমন রোগীর সংখ্যা ৬৮৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৩০ জন। ভর্তি মোট রোগীর মধ্যে মিটফোর্ডে ১০, শিশু হাসপাতালে ৭, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৮, হলি ফ্যামিলিতে ১৭, বারডেম ৫, মুগদা সরকারি হাসপাতালে ৩, বিজিবি হাসপাতাল ১ ও অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৯ জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু এমনিতে ৫-৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে দাঁতের মাড়ি কিংবা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ, বমি, পেটেব্যথা ও ডায়রিয়া, দুর্বলতা দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে।

 
Electronic Paper