কুমিল্লায় নারকীয় কাণ্ড
বাড়ছে অসহিষ্ণুতা
তুষার রায়
🕐 ১০:১৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০১৯
কুমিল্লায় খুনের নেশায় মত্ত যুবকের দায়ের কোপে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত আরও কয়েকজন হাসপাতালে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। পূর্বশত্রুতার জেরে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ চালান স্থানীয় রিকশাচালক মোখলেস। তাকে স্থানীয়রা পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এর আগে, বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেন নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। গত শুক্রবার ঢাকার ওয়ারীতে নার্সারির ছাত্রী সায়মাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে পালিয়ে যান প্রতিবেশী কাশেম। সাম্প্রতিক অতীতে এরকম নৃশংস ঘটনা বেশ কয়েকটি ঘটেছে, যা ক্রমশ বাড়ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মধ্যে নিষ্ঠুরতা ও দয়াহীনতা বাড়ছে। সহনশীলতা কমে আসছে। কেউ অন্যের কথা শুনতে বা মানতে চাইছে না।
কুমিল্লার দেবীদ্বারের আজকে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে সেখানে অসহিষ্ণুতার প্রকাশ দেখা গেছে। ধামতি ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের রিকশাচালক মোখলেসুর রহমান (৩৬) আজকে সকালে ঘর থেকে দা নিয়ে প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের বাসায় যান। ঘরে থাকা নুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগমকে (৪০) হঠাৎ কোপাতে শুরু করেন। স্ত্রীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে নুরুলকেও কুপিয়ে জখম করে মোখলেস। তাদের আর্তচিৎকারে নুরুল ইসলামের মা মাজেদা বেগম (৬৫) এগিয়ে এলে তাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাজমার। আর মাজেদার মৃত্যু হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এর পর মোখলেস রক্তমাখা দা নিয়ে যান আরেক প্রতিবেশী শাহ আলমের বাড়িতে। সেখানে তার ছেলে স্কুলছাত্র আবু হানিফকে (১২) কিছু বুঝে ওঠার আগেই জবাই করে হত্যা করেন। ছেলেকে বাঁচাতে এলে শাহ আলমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকেও (৪০) গলা কেটে হত্যা করেন মোখলেস। এ ছাড়া পাশের ছ্যাচড়া পুকুরিয়া গ্রামের বজলু মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগমও (৩৮) এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে পুলিশ এখনো তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তার আক্রমণে আরও কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। এ সময় স্থানীয়রা ঘাতক মোখলেসুরকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনার পর ধামতি ইউনিয়নের পুকুরিয়াপাড়া ও ছ্যাচড়া পুকুরিয়া পাড়ায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড পুলিশ সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার নয়। তবে স্থানীয়রা জানান, ঘাতক মোখলেসুর মাদকাসক্ত ও উগ্র-প্রকৃতির ছিলেন। এ প্রসঙ্গে সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্ব কোনো কারণ অবশ্যই আছে।
দেবীদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার বলেন, মোখলেসুরের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার নাকি মানসিক সমস্যা ছিল। এতটুকুই আপাতত জানতে পেরেছি। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এ দিকে বিশিষ্টজনরা বলছেন, একের পর এক এসব নারকীয় হত্যাকণ্ড সমাজে ভীতি সঞ্চার করছে। ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করলেও কোপ এড়াতে পারছেন না শুভশক্তির ধারকরা। ধর্ষকরা ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা নিয়ে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি খুব বেশি হচ্ছে না। আদালত থেকে জামিন নিয়ে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে উৎসাহিত হচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাও বাড়ছে। অপরাধী যত জঘন্য হোক তাদের বিচার-বহির্ভূতভাবে হত্যা সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ তাতে অপরাধের নেপথ্য কারণগুলো অজানা থেকে যায়।
তারা বলছেন, সামাজিক নৈকট্য কমে যাওয়া, বেড়ে চলা ব্যস্ততা, উন্নত জীবনের মোহ মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক আর নিষ্ঠুর করে তুলছে। তরুণরা যেকোনো কিছু পেতে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছে। বাবা-মা সন্তানের দেখভালে পর্যাপ্ত নজর দিচ্ছে না। সমাজের বিভিন্ন স্তরে নৈতিক অবক্ষয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।