ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডোমার রেলস্টেশনে অনিয়ম

নুরে রোকসানা সুমি, নীলফামারী
🕐 ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০১৯

যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। দৌড়ঝাঁপ। কাক্সিক্ষত টিকিট মিলছে না। কাউন্টার থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে টিকিট নেই। অথচ ২ থেকে তিন গুণ বাড়তি টাকায় কালোবাজারিদের কাছে টিকিট মিলছে। একই টিকিট দেওয়া হয় একাধিক ব্যক্তিকে। নীলফামারীর ডোমার রেলস্টেশনে হয় এ জাতীয় অনিয়ম। সম্প্রতি ওই রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

দেবীগঞ্জ উপজেলার নাছরুল হুদা নামে এক বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার জন্য একটি টিকিট কিনতে পাঁচ দিন আগে এসে লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো টিকিট নেই। বাধ্য হয়ে এক কালোবাজারির কাছ থেকে ৪৯৫ টাকার টিকিট কিনলাম ৮০০ টাকায়।’

তা ছাড়া এক টিকিট দুজনের কাছে বিক্রি করার ফলে সিটে বসা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে প্রায়শই।

ডোমার উপজেলার চিকনমাটি গ্রামের ভুক্তভোগী সুজন রাজ বলেন, তিনি গত ২৮ জুন ঢাকায় যাওয়ার জন্য ২৭ জুন কাউন্টার থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকিট কিনতে যান। এ সময় টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা টিকিটের নির্ধারিত দাম থেকে বেশি চেয়ে বসেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় কর্মকর্তার সঙ্গে। পরে বাধ্য হয়ে নির্ধারিত মূল্য থেকে ৭০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কিনেন। পরের দিন নির্ধারিত সময়ে ট্রেনে উঠে দেখেন তার আসনে আরেকজন যাত্রী বসে আছেন। আসন ছেড়ে দিতে বললে তিনি বলেন এটি তার আসন, তার কাছে টিকিট আছে। এ নিয়ে তার সঙ্গে বেশ বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দায়িত্বরত টিটিকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন দুটি টিকিটই বৈধ, তার কিছু করার নেই। শেষমেশ একজনকে দাঁড়িয়েই ঢাকায় আসতে হয়েছে।

সরেজমিন জানা যায়, নীলফামারীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ডোমারের মানুষের অন্যতম ভরসা রেল। উপজেলায় রয়েছে চিলাহাটি স্থলবন্দর ও ডোমার রেলস্টেশন নামে দুটি আন্তঃনগর রেলওয়ে স্টেশন। এ স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন পার্শ্ববর্তী ডিমলা, দেবীগঞ্জসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলার যাত্রীরা। স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন চারটি আন্তঃনগর ও ২/১টি লোকাল ট্রেন যাতায়াত করে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রফেসর খায়রুল আলম বাবুল বলেন, টিকিট কালোবাজারি হয় এমন কোন তথ্য আমার কাছে নেই, তবে চাহিদার তুলনায় টিকিট কম হওয়ায় অধিকাংশ টিকিট প্রত্যাশিরা টিকিট না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে থাকে। এ ষ্টেশনের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আসন বাড়ানোর দাবী জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা এ বিষয়ে বলেন, কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কেউ যদি উপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ডোমার রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আবদুল মতিন বলেন, যারা কালোবাজারি করে তারা অন্য স্টেশনের টিকিট এনে কালোবাজারি করেন। আর এক টিকিট দুজনের কাছে বিক্রি হয়েছে সেটা এনালগ সিস্টেম হওয়ার কারণে ভুলবশত হয়েছে।

সানারায় ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি গত ১৮ জুন ঢাকা যাওয়ার জন্য কাউন্টারের আসনে বসা আতিকুরের কাছ থেকে (ঙ-৬৯) আসনের টিকিট ক্রয় করি ১৫ জুন। নির্ধারিত দিনে ট্রেনে উঠে সৈয়দপুর রেল ষ্টেশনে পৌঁছালে এ আসনটি আরও একজন দাবী করলে কঠিন বিব্রত অবস্থায় পড়ি। ওনাদের হাতেও একই আসনসহ চারটি টিকিট থাকার ফলে আমাকে আসন ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়েছে।

ঈদ কিংবা উৎসব হলেতো কথায় নেই। ঈদে টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে নিলামে যা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২-৩ গুন বেশি দিয়ে, এমন অভিযোগ ডিমলা উপজেলার কলেজ শিক্ষক গোলাম আযমের।

তিনি বলেন, গত ঈদে ঢাকায় থেকে অনলাইনে আমি ও মায়ের জন্য দুটি অগ্রিম ফিরতি টিকিট ক্রয় করি (সৈয়দপুর-ঢাকা)। নির্ধারিত দিনে মা অসুস্থ থাকায় ঢাকা যাওয়া সম্ভব নয় বলে ডোমার টিকিট মাষ্টারকে বলি আমার কাছে একটি অতিরিক্ত আছে। এ কথা শুনামাত্রই তিনি আমার কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যেও চেয়ে কম দামে কিনে নেন এবং আমার সামনেই সেই টিকিট তিনগুন দামে বিক্রি করেন।

এমনই দাবি মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা অহিদুল ইসলামের।

তিনি বলেন, আমি কোন ঈদেই কাউন্টার থেকে টিকিট পাই না তাই প্রতি ঈদেই কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট ক্রয় করি ১১০০ টাকা দরে।

নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, এ এলাকায় ঢাকাগামী একটি মাত্র ট্রেন। যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যাও অনেক সীমিত। আসন কম হওয়ায় এলাকার কিছু লোক কালোবাজারিতে লিপ্ত থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমি একটি দিবা ট্রেনের জন্য জাতীয় সংসদকে অবগত করেছি। এ ছাড়াও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে আমরা আরও একটি ট্রেন পাব।

 

 
Electronic Paper