ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিদায় বেলায় মায়াবী ক্যাম্পাস

রোকনুজ্জামান মনি
🕐 ১:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০১৯

প্রতিবছর জুন-জুলাই এলে যেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোর দিকে তাকানো যায় না। প্রিয় মুখগুলোকে আর নিয়মিত সেই হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকতে দেখতে পাবে না ভেবে ক্যাম্পাসও যেন মলিন হয়ে থাকে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি দেওয়ালেও যেন ফুটে ওঠে বিষণ্নতার ছাপ। বাদামতলা, মুড়িচত্বর, বকুলতলা, তালতলা, ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ড, ক্যান্টিন, ফুচকা চত্বর, ছাউনি, টংদোকানসহ সবই যেন থাকে ভীষণ শূন্যতায় ভরা। কোনো কিছুতেই যেন প্রাণ থাকে না।

 

এখন থেকে চার বছর আগে যে ছোট ছোট মুখগুলো অনেকগুলো স্বপ্ন বুকে নিয়ে প্রবেশ করেছিল ক্যাম্পাসে, আজ তারাই শিক্ষা জীবনের দীর্ঘ সময় পার করে ছুটে চলেছে অন্য এক জীবনের দিকে। আজ থেকে চার বছর আগে যে ছেলেমেয়েগুলো ভাবত কবে তারা শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে বা গবেষণায় প্রবেশ করবে আজ কিনা তারাই শেষ সময়ে এসে নিজের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে শুধু সেই ক্যাম্পাসের সোনালি সময় টুকুকে ফিরে পাওয়ার জন্য।

ক্যাম্পাসে আগে যে মুখগুলোকে সারাদিন দেখা যেত হাসিমুখে পুরো ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াতে তারা কিনা এই বিদায় বেলায় এসে এতটা নীরব হয়ে গিয়েছে যে তাদের মুখের হাসিগুলোও কেমন জানি মলিন দেখায়। কি যেন একটা কিছু হারানোর সুর বাজছে তাদের মনের মাঝে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাচ্ছে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে কোনো না কোনো বিভাগের র‌্যাগ ডে থাকে। গোধূলিলগ্নে যখন র‌্যাগ ডে উদযাপন শেষে তারা ক্যাম্পাস ছাড়ে তখন তাদের চোখের কোনায় জমে থাকা অশ্রুবিন্দুগুলো যেন বারবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে চায়। অনেকে নিজেকে আর আটকাতে না পেরে বিসর্জন দিয়ে যায় দুই ফোঁটা অশ্রু। বিদায় বেলায় তাদের যেন মনে পড়ে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো।

বিদায় বেলায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহতাবুর রহমান সবুজ বলেন, চার বছর আগে যখন ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছিলাম সেই দিন কিছু স্বপ্ন বুকে নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু ভাবতেও পারিনি আজ বিদায় বেলায় আমাকে অনেকগুলো স্মৃতি বুকে চেপে নিয়ে যেতে হবে। জানি না সবাইকে ছেড়ে কীভাবে থাকব, জানি না প্রিয় ক্যাম্পাসে না এসে কীভাবে থাকব? ফেলে যাওয়া দিনগুলোকে কীভাবে ভুলে থাকব? তবে যেখানেই থাকি প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় মুখগুলোকে কখনোই ভুলে থাকতে পারবো না। ভালোবাসাটা সারাজীবন অক্ষুণ্নই থাকবে।

ইংরেজি বিভাগের বিদায়ী মুনিয়া নিশাত তুলি বলেন, আগে সিনিয়রদের কাছে বিদায়ের কথা শুনতাম। তারা তাদের বিদায় বেলায় অনেক কষ্ট অনুভব করত। আমি সেই দিন ভাবতাম কষ্ট পাওয়ার কি আছে? সবই তো হচ্ছে জীবনের তাগিদে।

কিন্তু আজ বিদায় বেলায় খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি, কেন তারা কষ্ট পেত! কষ্টটা যে বুকের মাঝে কোথায় হয়, যে চলে যায় সেই শুধু বোঝে। আর কেউই সেই কষ্টটা বুঝতে পারবে না। ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদের প্রতি কতটা যে ভালোবাসা থাকে তা এই দিনে এসে দাঁড়ালে টের পাওয়া যায়। চলে যাচ্ছি ভাবলেই যেন বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠছে।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক বিদায়ী শিক্ষার্থী হোসাইনুল আরেফিন সেতু বলেন, জীবন কত বিচিত্রময়! চার বছর আগে যে মুখগুলো অচেনা ছিল সেই অচেনা মুখগুলোই যেন এখন বড় পরিচিত, যাদের সঙ্গে কোনো দিন পরিচয় ছিল না, সেই তারাই যেন আজ মনের কোণে অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।

আসলে কতটা আবেগ, কতটা ভালোবাসা যে আমাদের ক্যাম্পাস ঘিরে থাকে তা হয়তো এই বিদায়ের ক্ষণে দাঁড়ালে খুব ভালোভাবে অনুভব করা যায়। সেই প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে আর হয়তো তারা অযথাই আর সুতার্কিক হয়ে উঠবে না, আর হয়তো আড্ডায় নিজের যুক্তিকে খাড়া করে বুদ্ধিজীবী হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে না।

সময়ের কাছে হার মেনে এভাবেই জীবনের দিকে ধাবিত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিবছরই বিদায়ীদের ছেড়ে যেতে হয় তাদের ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাসের সোনাফল সময়গুলোকে। কিন্তু যাওয়ার সময় নিয়ে যায় শিক্ষকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, জুনিয়রদের শ্রদ্ধা, বন্ধুদের ভালোবাসা আর নিজের জমানো অনেক স্মৃতি।

 

 

 

 

 
Electronic Paper