লিটলম্যাগ
রঙের ফসল বর্ণিল
দ্বীপ সরকার
🕐 ২:০৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০১৯
‘বর্ণিল’ শাহমুব জুয়েল সম্পাদিত লিটলম্যাগাজিন। খুব দৃষ্টিনন্দন ও পরিপাটি প্রচ্ছদের এই বইটিতে প্রবীণ ও নবীনের সমারোহ ঘটেছে। ১৪৪ পৃষ্ঠা ক্ষুদ্রাবয়বের এই বইটি সম্পাদক মহোদয় তার স্বকীয়তা দিয়ে প্রচেষ্টা লিটলম্যাগ আন্দোলনের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন।
বর্ণিলে সাতটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে কাজল কাপালিক, মিল্টন বিশ্বাস, ড. ফজলুল হক সৈকত, অনু হোসেন, পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, অনুপম হাসান, শাহমুব জুয়েল। গবেষক মিল্টন বিশ্বাস উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা বিষয়ক প্রবন্ধ ‘এক দশকের উন্নয়ন : পরিপ্রেক্ষিত গ্রামীণ জনপদ‘ এ লিখেছেন ‘গ্রামীণ জনপদে ধর্মান্ধতার বীজ যেন প্রসারিত না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে’। এখানে টেকসই উন্নয়নে যে কোনো দেশে, যে কোনো ধর্মে ধর্মান্ধতা যে একটা কঠিন প্রতিবন্ধক সে কথাই মিল্টন বিশ্বাস সাহসিকতার সঙ্গে লিখেছেন। আবার ‘খোয়াবনামা’ খ্যাত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে নিয়ে লিখেছেন সম্পাদক নিজেই। ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস : গল্প ভুবনের রাজকুমার’ শিরোনামে তার ওপর সাংঘাতিক একটি গবেষণা খুঁজে পাই। এই আর্টিকেলে আলোচক বলেন ‘ভিন্ন রকম গল্পের আয়োজক তিনি। কল্পনা বাস্তবের সঙ্গে থেকেই সময়ের গতরে চিন্তার প্রবেশ ঘটিয়েছেন। অস্তিত্ব বোধের দিকে তার নজর’।
আলোচক এই কথাসাহিত্যিককে নিয়ে বেশ সুন্দর আলোচনার অবতারণা করেছেন যা ‘বর্ণিল’কে শিল্প সফল করেছে। এ ছাড়া সবগুলো প্রবন্ধই সময়কে অনুষঙ্গ করে গুরুত্ব পেয়েছে। ‘বর্ণিল’র একটি চমকপ্রদ দিক -দুটি ইংরেজি কবিতা। একটি হলো কবি সোরামারু তাকাইমা অন্যটি কবি মাহফুজ আল হাসানের। পশ্চিমা সাহিত্যকে ভালোবেসে যেভাবে রাষ্ট্রচিন্তা থেকে সামাজিক চিন্তার প্রভাব ও স্বাদ মানুষে মানুষে রেখেছে সেভাবে সম্পাদক ‘বর্ণিল’কে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিয়ে যেতে কম সাহস দেখাননি এবং সেটা পেরেছেন। বিদেশি সাহিত্যকে ভালোবাসলেই তো বাংলাদেশের সাহিত্যকে অন্যরা ভালোবাসবে এমন সৎ চিন্তায় অনুবাদ সাহিত্য নিয়েও কাজ করেছেন সম্পাদক। দুটি অনুবাদ আছে এখানে। আরেকটি গল্প ভাষান্তর করেছেন মাইনুল ইসলাম মানিক। দুটিই খুব চমৎকার। তবে কবি ও প্রাবন্ধিক আবু আফজাল মোহ. সালেহর ভ্রমণ ফিচারটি ‘বর্ণিল’কে আলাদা গুরুত্ব এনে দিয়েছে। তার ভারতের ট্রায়াক্স ভ্রমণ কাহিনী এবং ছবিগুলো পাঠকের কাছে ভালো লাগবে।
এ ছাড়া নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে গল্প পাঁচটি, অণুগল্প চারটি, সিরিজ কবিতা একটি, কবিতা চৌত্রিশটি, বই আলোচনা একটি। ‘বর্ণিল’র সবগুলো কবির কবিতা চরম আধুনিকতার পরশে সময়কে আঁকড়ে ধরছে। কবিতা নির্বাচনে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি । আরো বেশি আন্দোলিত হয়েছি কবি বঙ্গ রাখালের সিরিজ কবিতা পড়ে। তিনি ‘আত্ন হনন : সংগোপনী প্রেম- ২’ এই গদ্য কবিতায় যেভাবে বলেছেন ‘এখনো মাটির কাছে কামঘুড়ি উড়ে যায় অহর্ণিশ তবুও জানলে না নারী স্পর্শ করা কতটা কাঁপন তোলে, অন্ধকারে ডুবে যায় শরীর, মন:’।
এমন মর্মস্পর্শী কবিতাও জায়গা করে নিয়েছে এখানে। একটি বই আলোচনা আছে। কবি আসাদ চৌধুরীর ‘ঘরে ফেরা সোজা নয়’ আলোচনা লিখেছেন আহমদ ইউসুফ। আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ঘরে ফেরা সোজা নয়’ কাব্যে কবির নিজস্ব অভিব্যক্তি, শিল্পবোধ ও বাক্য বিন্যাস। আর কথার জাদুতে কীভাবে বিমোহিত করেছেন। বাংলা ও খাঁটি বাংলা শব্দের পাশাপাশি আরবি, ফারসি, ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের দক্ষতা কবিতাকে করেছে ঋদ্ধ। আলোচক খুব দক্ষতা খাটিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর কাব্য আলোচনা করেছেন যা সকলের হৃদয় ও মননে গেঁথে থাকবে।