ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
বগুড়া প্রতিনিধি
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০১৯
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ায় বগুড়ায় মাইশা ফাহমিদা সেমন্তি (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে এক বন্ধুর কথাও উল্লেখ করেছে সে। কিন্তু নিহতের বাবা আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ সেই অভিযোগ গ্রহণ করেনি। দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশের কাছে ধরনা দেওয়ার পর বাবা হাসানুল মাশরেক মেয়ে হারানোর ক্ষোভ, কষ্ট ও হতাশার কথা জানিয়ে গত মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, মাইশার আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের একজন পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তার ভাতিজা হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, মাইশা ফাহমিদা বগুড়া শহরের ওয়াইএমসিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ১৭ জুন রাতে নিজ কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে। পরদিন সকালে লাশ উদ্ধারের পর পরিবারের লোকজন মাইশার লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটটি পায়। সুইসাইড নোটে মাইশা আত্মহত্যার বিস্তারিত কারণ উল্লেখ না করলেও আবির নামে এক বন্ধুর নাম লিখে রাখে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করে।
মাইশার পরিবারের লোকজন জানান, সুইসাইড নোট উদ্ধারের পর মাইশার মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারেন, আবির নামের এক ছেলের সঙ্গে মাইশার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আবির বিভিন্ন সময়ে মাইশার মোবাইল ফোনেও কথাও বলেছে।
‘মাইশা ফাহমিদা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে মেসেঞ্জারে আবিরকে একান্ত কিছু ছবি পাঠায় মাইশা। সেই ছবি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শাহরিয়ার অন্তর নামের আরও এক যুবক জড়িত। এ ঘটনায় অপমান সইতে না পেরে লজ্জা ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করে মাইশা।
মাইশার বাবা হাসানুল মাশরেক বলেন, ‘আবির নামে এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মাইশার। যে রাতে সে আত্মহত্যা করেছে সেই রাতে মেয়ে আমাকে বলেছিল, আবিরকে বিশ্বাস করে তার মেসেঞ্জারে কিছু ছবি পাঠিয়েছিলাম। সে সেই ছবি ভাইরাল করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাইশার আত্মহত্যার ঠিক একদিন আগে আবির আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘মাইশাকে দেখে রাখবেন ও আত্মহত্যা করতে পারে।’ এখন প্রশ্ন হলো, মাইশা আত্মহত্যা করবে সেটা আবির আগে থেকেই জানল কী করে?
হাসানুল মাশরেক বলেন, ‘আবির ছাড়াও শাহরিয়ার অন্তর নামে এক বখাটে মাইশাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই আইসিটি আইনে মামলা করতে চাই। কিন্তু পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তার ভাতিজা হওয়ায় আবিরের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের এই পদস্থ কর্মকর্তা আগে দিনাজপুর জেলায় ছিলেন। বদলি সূত্রে তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে রয়েছেন। আবির তার ভাতিজা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় তাদের বাড়ি হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আবির বগুড়া শহরের মালতিনগর এলাকায় থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান বলেন, ‘মেয়েটির আত্মহত্যার পর তার বাবা অন্তর নামে একজনের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ তুলেছিলেন। এখন আবার আবির নামে আরেকজনের নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আবির যে আত্মহত্যার পেছনে জড়িত তার কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি তার পরিবার। এ কারণে অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়নি।’