ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চোর বেশি না সাধু বেশি

আলম তালুকদার
🕐 ২:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ০২, ২০১৯

যে চুরি করে সেই চোর। চোর শব্দটি বিশেষ্য। আর চোর যখন চুরি কর্মটি সমাপন করে থাকে তখন তাকে বলে বিশেষণ। তবে নেতিবাচক! প্রথমে আমরা জেনে নিই আইনের ভাষায় চুরি কাকে বলে। দণ্ডবিধি ৩৭৮ মোতাবেক, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কারও দখল হতে তার সম্মতি ব্যতীত কোনো অস্থাবর সম্পত্তি অসাধুভাবে স্থানান্তর করে তবে তাকে চুরি বলা হয়। যদি খোলামেলা স্থান হতে চুরি করে তাহলে ৩৭৯ ধারায় এবং আবদ্ধ মানে ঘর থেকে যদি চুরি হয় তাহলে ৩৮০ ধারায় বিচার হবে। চুরির অনেক প্রতিশব্দ আছে। যেমন, চৌর্যবৃত্তি, তস্করবৃত্তি, চুরিচামারি, বাটপারি, জোচ্চুরি, চোরামি, প্রতারণা, স্তেন, স্তেয়, অবহার মোষণ গ্যাঁড়ানো ইত্যাদি। চোরকে ‘নিশিকুটুম্ব’ও বলা হয়ে থাকে। কারণ এরা নিশিকালে চুরিকর্মটি করে থাকে। অগোচরে এ কুটুম এসে সব সাফা করে নিয়ে যায়।

বিখ্যাত লেখক মনোজ বসুর একটা অতি পাঠকপ্রিয় উপন্যাসের নাম ‘নিশিকুটুম্ব’। ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না খায় ধরা’ প্রবাদটির একটা ছায়া বইটিতে পাওয়া যায়। চুরি যে একটি বিদ্যা, চুরি যে একটা শিল্প তা বইটি পড়ে পাঠক অনুধাবন করতে পারবেন। এখন তো আর সিঁধ কেটে চুরি করার দিন নেই। এখন হয় ডিজিটাল চুরি। কোড নাম্বার চুরি করে কোটি কোটি ডলার চুরি হয়ে যাচ্ছে! আগের দিনে পেশাদার চোর ছিল। তাদের গুরু ছিল, তাদের আড়তদার ছিল। সিঁধকাটাও যে শিল্প তারও প্রমাণ পাওয়া যাবে বইটিতে।

চোরেরও ধর্ম আছে, নীতি আছে। কার বাড়িতে চুরি করবে এ জন্য আগে হতেই রেকি করে থাকে। সব বাড়িতে চুরি করা যাবে না। যে বাড়িতে যুবতী মেয়ে আছে বা বিধবা যুবতী আছে সে বাড়িতে চুরি করা নাস্তি। আবার যে বাড়িতে বুড়াবুড়ি আছে সে বাড়িতেও চুরি করা নাস্তি।

কথা হলো, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। আমার লেখা পড়ে কেউ চোরও হবে না, কেউ সাধুও হবে না। তবে আনন্দ পেতে পারেন। যারা দিনেদুপুরে পকেট মারে তারাও কিন্তু চোর। একবার এমন এক চোর একজনের পিকপকেট করেছে। মামলা হয়েছে, সাক্ষীও হয়েছে। বিচারক আসামিকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কিছু বলার আছে?

আসামি সাহস করে বলল স্যার, আমার বিরুদ্ধে ১০ জন প্রত্যক্ষ সাক্ষী দিয়েছে, তারা আমাকে পকেট মারতে দেখেছে। একশত জন লোক হাজির হয়ে যদি আপনার সামনে এসে বলে আমাকে পকেট মারতে দেখেনি, তবে কি আমাকে খালাস দেবেন?

একবার দুই চোরে মানে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হয়েছে। এখন কে বড় চোর তার প্রতিযোগিতা। একজন বলে ওই যে গাছের ডালে একটা ঘুঘু বসে আছে, ওটাকে আমি ধরে আনতে পারব। উড়াল দেওয়ার আগেই।

দ্বিতীয় চোর বলল, এইডা কোনো চুরি হলো? আরে আমি ডিমে তা দিতে বসা ঘুঘুর তলে যে ডিম আছে না, সেই ডিম দেখ কীভাবে চুরি করে আনি! ঘটনা তাই যখন হলো, তখন হতে সে আরও গুরুতর ভাই হয়ে গেল! চুরি নানারকমভাবে আমাদের সঙ্গেই বেঁচে আছে। যেমন কেউ খাবার চুরি করে, কেউ টাকা চুরি করে, কেই অফিস টাইম চুরি করে, কেউ পরীক্ষা হলে চুরি করে লেখে! কেউ অন্যের লেখাও চুরি করেন।

কেউ মালিকের গাড়ির তেল চুরি করে, কেউ ওভারটাইম চুরি করে। আবার এমনও কেউ কেউ আছে রোজা থেকে চুরি করে পানি খায়। পানিতে ডুব দিয়েও কেউ কেউ চুরি করে পানি পান করে থাকে। অনেকের মধ্যেই চোর চোর স্বভাব প্রকৃতিগতভাবেই বিরাজ করে থাকে! কাজেই এ কথা বলতে পারি রঙিলা এ দুদিনের দুনিয়ায় সাধুর সংখ্যা খুব বেশি নয়!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper